রাজনীতি না করার জের

বুকে রামদা ধরে খালেদা জিয়ার ছবি পোস্ট করাল ছাত্রলীগ

আহত শিক্ষার্থী
আহত শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

“খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেওয়ানো হয়। তাছাড়া আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোন ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।”

মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগে কথাগুলো জানান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদ।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের রাজনীতি না করায় নিহাদকে নির্যাতনের শিকার হয়। রবিবার রাতে সদ্য চালু হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি আরও জানান, আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না, এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার বুকে রামদা ধরা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেওয়ানো হয়।

লিখিত অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

নিহাদের সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে নিহাদকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আহত অবস্থায় নিহাদকে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠান।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে নিহাদের সহপাঠীরা জানায়, নির্যাতনের পর পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে সে। অত্যাচারের পর বেশ কয়েকবার বমিও করেছেন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ তাকে আবাসিক হলে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সাথে সাথেই তাকে নাট্যকলা বিভাগের হিমেল থাপ্পড় মারে। এছাড়া লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মুমিন, একই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীরসহ আরও ৫ ৬ জন টানা লাথিঘুষি মারতে থাকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক সময় মারতে থাকেন নাঈম। এ সময় তিনি কেন রাকিবের রাজনীতি করেন না। অন্যদেরও নাকি রাজনীতি করতে বাধা দিয়েছি, এসব প্রশ্ন করতে থাকেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নাই। একপর্যায়ে নাট্যকলার হিমেল আমার হাতে রামদা দিয়ে আমাকে যাযাবর নাঈমের কাছে রাজনীতি করব বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলে। কোন শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি।

এ দিকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের দরজা আটকে আন্দোলন করছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, আমাদের ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। আইন দ্বারা আমরা যা করতে পারব তা আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে এই সময়ে আমরা সবার সামনে উপস্থিত হবো।

এদিকে এই ঘটনায় তিনসদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. হুমাইয়ুন কবীর সোমবার বিকালে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত কমিটির সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার, সদস্য সচিব প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান, সদস্য ছাত্র উপদেষ্টা ড. তপন কুমার সরকার। আগামী তিন কার্যদিবসে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ