নুর-রাশেদদের ‘পকেট কমিটি’ নিয়ে তোলপাড়

কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন নুর-রাশেদ-মামুন-ফারুক ও জাহের (ছবিতে নেই)
কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন নুর-রাশেদ-মামুন-ফারুক ও জাহের (ছবিতে নেই)  © ফাইল ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভাঙন-দ্বন্দ্ব অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এবার সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যে নুর-রাশেদদের সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এক নেতা। অন্যদিকে, নুর-রাশেদরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠন করেছে, এমন অভিযোগ এনেছেন খোদ সংগঠনটির অনেকেই। কমিটি ঘোষণার পর এ নিয়ে ফেসবুকে সরব তারা।

জানা গেছে, শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ২টায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর বিজয়নগরে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ হয়। ভোট গণনা শেষে রাত ১০টায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং আরিফুল ইসলাম আদীব। সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মোল্যা রহমতুল্লাহ। 

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও আরও ৩৮ জনকে মনোনীত করে ৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া গত কমিটির পাঁচ সদস্যকে (নুরুল হক নুর, রাশেদ খান, হাসান আল মামুন, ফারুক হোসেন ও আব্দুজ জাহের) এই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা নতুন নেতৃত্বকে পথনির্দেশনা দেবেন।

এদিকে, কমিটি ঘোষণার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে সদ্য ঘোষিত এই কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রহমুতাল্লাহ রবিন নেহাল ফেসবুক একাউন্টে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিগত দুই বছরে কেন্দ্রীয় সকল প্রোগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। আজকে নির্বাচন ছিল তিনটা পদে। সভাপতি, সেক্রেটারি এবং সাংগাঠনিক সম্পাদক। আমাকে পদের বিষয়ে অবগত করা হয়নি। তাছাড়া বড় প্রশ্ন এই কমিটি পূর্বে প্রস্তুত ছিল। লিস্টটা দেখলেই বুঝা যায়। সেখানে আমাদের যাদের পদ দেয়া হয়েছে সেটা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। যেগুলা আগে থেকিই কম্পিউটারে টাইপিংয়ের মাধ্যমে লেখানো ছিল।

“যারা সভাপতি-সেক্রেটারি হয়েছে তাদেরগুলো হাতে লোখা। এর অর্থ হচ্ছে বাকিগুলো টাইপিংয়ের মাধ্যমে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। আমাকে যে পদে রাখা হয়েছে আমি এর চেয়ে ভালো পদ আশা করি। সেটা না হোক কিন্তু এখানে এমন কিছু ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে যারা মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস, অল্প কিছুদিন হলো সংগঠনে আসছে।”

তিনি আরও বলেন, রুদ্র মুহাম্মদ জিহান নামে একটা ছেলে আছে, আরো কিছু আছে, জারিফ নামে একজন আছে, যে বিতর্কমূলক কর্মকান্ডের কারণে এর আগে একবার বহিস্কৃত হয়েছিল। তারপরও আবার তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। প্রেরণা পারমিতা নামে যে পদ দেয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে একটা ফেসবুক আইডির ফেক নাম।

এদিকে, নেহাল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সর্বপ্রথম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বাবা মা ও নিজের কাছে। এরপর ক্ষমা চাচ্ছি যে সকল সাহসী তরুণদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তাদের কাছে। আমি কাউন্সিলে কোন প্রার্থী ছিলাম না, এবং আমাকে কেন্দ্রীয় যে পদে পদায়িত করা হয়েছে তা আমার অজান্তে করা হয়েছে তাই আমি উক্ত পদ থেকে অব্যহতি ঘোষণা করছি। বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে শিঘ্রই।”

সংগঠনটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খান ফেসবুকে লিখেছেন, “জয়ী হলো সিন্ডিকেট। হেরে গেলো সততা। শেষ পর্যন্ত নিজে না করে ভাইকে দিয়ে হলেও পরাজিত করা হলো সঠিক নেতৃত্বতে। তার সাক্ষী আজকের কার্যালয়।”

কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পওয়া মো. শাকিল মিয়া লিখেছেন, “ননসেন্স কমিটি!সারাদেশের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই কিন্তু ননসেন্স লোকদের ননসেন্স কমিটিকে কোনভাবেই স্বাগত জানাতে পারছি না। পদ ডাজেন্ট ম্যাটার তবে অবমূল্যায়নের প্রশ্নে সর্বদা কঠোর। কাকে, কোথায় কোন পজিশনে রাখতে হয় সেটার নুন্যতম জ্ঞান না থাকলে এদেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বড় বড় বয়ান দেওয়া আর আর প্রকৃতঅর্থেই কল্যাণমুখী আর সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা এক জিনিস না।”

মো. শফিকুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “মাহফুজ রহমান খান ভাই ছাত্রদের ভালবাসার কাছে হারে নাই হেরেছে সিন্ডিকেটের কাছে। নির্বাচন কমিশন ১০০% নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে কিন্তু তারা ভোটারদের একটা সিন্ডিকেট প্রভাব থেকে বিরত রাখতে পারে নাই যেই সিন্ডিকেট ভোটাদের প্রভাবিত করেছে। আমি মাহফুজুর রহমান খান ভাইয়ের পোলিং এজেন্ট ছিলাম আমি দেখেছি কিভাবে সিন্ডিকেট কাজ করেছে। আপনিও যে সেই সিন্ডিকেটের একজন আমি কখনোও ভাবতে পারি নাই।”

এসব বিষয়ে সংগঠনটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা হতে পারে। একটা সংগঠনে তো সবাইকে খুশি করে পদে রাখা সম্ভব না। দুয়েকজনতো রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে ফেসবুক পোস্ট দিতেই পারে। সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় নয়। সাংগাঠনিক সিদ্ধান্ত না মানলে আমাদের কিছু করার নেই।


সর্বশেষ সংবাদ