৬৯ বছরে ছাত্র ইউনিয়ন

  © টিডিসি ফটো

‘শোষিতের সংগ্রামে স্লোগানে মিছিলে, আমরাই লিখবো মুক্তির গান’ এই স্লোগানকে ধারণ করে লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৬৮ বছর পেরিয়ে ৬৯ বছরে পদার্পন করছে আজ সোমবার (২৬ এপ্রিল)। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শোভাযাত্রাসহ ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে।

সকাল ১১টায় রাজধানীর শহীদ মতিউল-কাদের চত্বরে স্কুল শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মতিউল-কাদের চত্বর থেকে একটি র‍্যালি শুরু হয়ে হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। র‍্যালি শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফয়েজউল্লাহ বলেন, আমরা এক গভীর সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে করোনা মহামারীর সাথে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে, অন্যদিকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বহু মানুষ শুধুমাত্র সুচিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিত লকডাউনে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়নের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা শপথ নিতে চাই, যতদিন এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের উপর শোষণ বন্ধ না হবে ততদিন ছাত্র ইউনিয়ন তার লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, আমরা ছাত্র ইউনিয়নের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন এক সময়ে পালন করছি যখন সারাবিশ্ব করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত। বিগত ২১ দিন ধরে আমরা শ্রমজীবী মানুষকে ন্যূনতম এক বেলার খাবারের নিশ্চয়তা দিতে আমরা শ্রমজীবী ক্যান্টিন পরিচালনা করছি। সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনের প্রতিবাদে আমরা প্রতিবাদ করছি। স্বৈরাচারী সরকার মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা দিচ্ছে না। এমন কঠিন মূহুর্তে ছাত্র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা পালন করছি। লাখো শহীদের শপথে আমাদের যেই সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের সকল শিক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানাই। একই ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের সকল নেতাকর্মীকে দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পরার আহ্বান জানাই। শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।”

সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্যে এবং শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। র‍্যালিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, কেএম মুত্তাকী, সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক অনুপম অমি, সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাবেক সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ঢাকা মহানগর সংসদের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বী খান, ঢাকা মহানগরের সাবেক নেতা আশিকুল ইসলাম জুয়েলসহ অন্যান্য সাবেক এ বর্তমান নেতৃবৃন্দ।

ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করার আহবান নিয়ে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল গড়ে উঠে তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’। শুরুতে সংগঠনের নাম পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিকাশের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে স্বাধীন দেশে নামকরণ হয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

ছাত্র ইউনিয়নের অগ্রযাত্রা ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৮’র সেনাসমর্থিত সরকারবিরোধী আন্দোলন, ২০১৩’র গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলনে অব্যাহত ছিলো।

গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলমন্ত্র করে দেশের ছাত্র সমাজের সকল অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ছাত্রদের অধিকার, দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণকে যখনই পরাধীনতার শিকলে বন্দী করবার পাঁয়তারা দেখা গেছে, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা তা রুখবার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হয়নি। শহীদ মতিউল, কাদের, শাহাদাত, নূতন, আসলাম, সঞ্জয়, টিটো, সুজন, রাজু, বিপ্রদাশসহ শত শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শোষণমুক্ত দেশ গড়ার লড়াইয়ে আপোষহীন সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।


সর্বশেষ সংবাদ