ছাত্রফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফি মওকুফসহ ৬ দাবি

  © টিডিসি ফটো

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, প্রচার সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ ও দপ্তর সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী।

সভাপতি মাসুদ রানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইতিহাসের এই দিনে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ১৯৮৪ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ সময়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট গড়ে ওঠে। এরপর দীর্ঘ সময়ে আমরা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে লড়েছি। দীর্ঘ এ সময়ে আমরা জনগণের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হয়েছি, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ইউজিসি প্রণীত ‘ ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্র’-এর বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি।

দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা সর্বজনীন- বিজ্ঞানভিত্তিক-সেক্যুলার- গণতান্ত্রিক একই ধারার শিক্ষার দাবিতে ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে আজও লড়ছি।

দীর্ঘ এ লড়াইয়ে আমরা প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন ও হামলা- মামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কোন বাঁধাই আমাদের লড়াইকে রুখতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে দুইজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং তিনজন শিক্ষককে শোকজ করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, মত প্রকাশের অধিকার মারাত্মকভাবে সংকুচিত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর মাধ্যমে অনেককে কারারুদ্ধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষা কমিশন গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ধ্বংসের আয়োজন চলছে।

সাবেক সভাপতি আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, অনেক ছাত্র মনোভাব ব্যক্ত করেন, আমরা রাজনীতির বিষয়ে কিছু ভাবতে চাই না,রাজনীতি করতে চাই না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, অরাজনৈতিক বলে কিছু নাই। ছাত্র রাজনীতি আজ দুধারায় বিভক্ত। এক ধারার রাজনীতি ছাত্রদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত করে,তাদের চরিত্র নষ্ট করে। আর এক ধারার রাজনীতি আছে, যে রাজনীতি ছাত্রদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করে, অধিকার সচেতন করে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এই দ্বিতীয় ধারার রাজনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।

বক্তারা আরও বলেন, করোনা মহামারীর জন্য আজ প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ছাত্রদের সহায়তায় কার্যত কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আর্থিক, মানসিক ও নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আমরা একটি পরিসংখ্যান থেকে জানি, প্রায় ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসগুলোতে অংশ নিতে পারেনি। অথচ পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন-ফি নেওয়া হচ্ছে। অথচ দরকার ছিলো করোনা কালে সমস্ত বেতন- ফি মওকুফ করা।

আলোচনা সভা শেষে সভাপতি ৬ দফা দাবির ভিত্তিতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাদের দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে-

১. করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ফি মওকুফ কর।

২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে পরীক্ষা নাও। ক্যাম্পাস খোলার রোডম্যাপ ঘোষণা কর। বিশ্ববিদ্যালয়ে নাইটকোর্স বন্ধ কর।

৩. সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ কর।

৪. স্কুলস্তরে শিখনকালীন মূল্যায়নের নামে শিক্ষকের হাতে মার্কস দেয়া যাবে না।

৫. ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ কর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করা।

৬. বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা কর।


সর্বশেষ সংবাদ