চবিতে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় অনুপস্থিত ছাত্রদল ও বাম সংগঠন

মতবিনিময় সভা
মতবিনিময় সভা  © টিডিসি ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো। 

আজ রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সংগঠনগুলো হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিশ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, স্টুডেন্ট’স এল্যায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও অধিকার রক্ষা পরিষদ। মতবিনিময় সভায় প্রত্যেক সংগঠনের প্রতিনিধি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে তাদের অবস্থান, সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। 

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, কে কতবড় সংগঠন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণকে কতটুকু শিক্ষার্থীদের পক্ষে রয়েছে। অনেকে বলছেন জুলাই আন্দোলনে আমরা ছাত্র সংগঠনের অবদান অস্বীকার করছি। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি না। কখনোই আমরা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি কারো অবদান অস্বীকার করিনি। আমি মনে করি ছাত্র সংগঠনগুলো পেছনে ছিল বলেই আজকে আমরা সামনে আসতে পেরেছি। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে সামনেও ফ্যাসিবাদ কে নির্মূল করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে খুবই দুঃখ লাগছে আজকে বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন এবং অনেকগুলো ক্রিয়াশীল সংগঠন উপস্থিত নেই। আপনাদের রাগ অভিমান থাকতে পারে। এগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি না আসেন তাহলে সমাধানের সুযোগ তো তৈরি হচ্ছে না।

ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, ৫ আগস্টের পরে একশ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। আইনের শিথিলতার অভাবে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা, প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের উপর এসে পড়েছে। অথচ তাদের এখন রাষ্ট্র গঠনে সভা-সেমিনার এবং সিম্পোজিয়াম করার কথা। সংস্কার প্রক্রিয়া কিভাবে হওয়া উচিত তা দেখানোর কথা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসনের কাজ কি? প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব পলিসি মেকারদের। কিন্তু তারা যদি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পেছনে অন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে ভুল করবে। দেখা যাবে শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়রুল হাসান আরিফ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির দুইটা কনসার্ন৷ একটি জুলাই গণহত্যার বিচার। আমরা দেখছি জুলাইয়ের বিচার সঠিকভাবে হচ্ছে না। আবার আমরা মবেরও পক্ষে না। আমরা আইনের সঠিক মাধ্যমেই তাদের বিচার চাই। আমাদের আরেকটি কনসার্ন সংবিধান সংস্কার। আপনারা দেখবেন আমাদের সংবিধানের পাওয়ার স্ট্রাকচার এমন, যে কেউ স্বৈরাচার হতে বাধ্য। আমরা এমন সংস্কার চাই যাতে সাংবিধানিক ভাবে কেউ নতুন হাসিনা হতে না পারে।

ইসলামি ছাত্র মজলিশ চবি শাখার সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন, আফসোস হচ্ছে মুখে আমরা ঐক্য এবং সংহতির কথা বলি। কিন্তু আজকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সংহতি সভায় অনেক ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন উপস্থিত নেই। সংহতি কি শুধুই ব্যানারে দেখানোর জন্য? রাজনৈতিক যেই প্যারামিটার দিয়ে আমরা ছাত্রলীগ কে মাপি তা অন্য সংগঠনের সাথে যায় না। আমরা বিশ্বাস করি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল অন্য সবার থেকে ভিন্ন। ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র মজলিসসহ অন্যান্য সংগঠনের যে দ্বন্দ্ব ছিল তা অন্য সংগঠনের সাথে থাকতে পারে না। কিন্তু ২৪ এর পরেও যদি আমরা একই দ্বন্দ্ব ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের বা অন্য সংগঠনের মধ্যে দেখি তাহলে তা অপ্রত্যাশিত। 

তবে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কোনো নেতা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চবি শাখা সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা বলেন, আমাদের কেন্দ্র থেকে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ছাত্রশিবির কোনো প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকলে আমরা থাকবো না। 

বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এধরনের বিভক্তি কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বিভক্তির তেমন কিছু নাই। ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করলে তাদের জন্য শুভকামনা। তবে পরবর্তীতে আমরা কোনো প্রোগ্রামে থাকবো কি-না এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হলেই জানাবো। 

এছাড়া বক্তব্য রাখেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রাকিবসহ অন্যান্যরা।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে গত ২৫ নভেম্বর এক সপ্তাহব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।


সর্বশেষ সংবাদ