ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে মাদকসেবী-ছিনতাইকারীরা

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি। তখন শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও এতদিন পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। অবশেষে গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়নের অভিযোগ উঠেছে।

ঘোষিত কমিটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় হলে শিক্ষার্থীদের মারধরে অভিযুক্ত, চাঁদাবাজ ও মাদকসেবীদের হলগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংগঠনটি বলছে, তারা যাচাই-বাছাই করেই পদ দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই আলোচনায় উঠে এসেছে বিতর্কিত নেতাদের নাম। এদের মধ্যে ‘ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বঘোষিত সম্রাট, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, এমনকি  নানা অপরাধে জেলে যাওয়া নেতাদের নামও রয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিতর্কিতদের মধ্যে একজন ঢাবি কমিটিতে সমাজসেবা সম্পাদকের পদ পাওয়া এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপসম্পাদক সিফাত আহাম্মেদ। ২০২৩ সালের ৬ মে শাহবাগের কবির হোটেলে দাবিকৃত ১০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে দুই দফায় ১৪ হাজার টাকার খাবার ফ্রি খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে গণভবন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাবির আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সভাপতি হিসেবে মাজহারুল কবির শয়ন ও সেক্রেটারি হিসেবে তানভীর হাসান সৈকতের নাম ঘোষণা করা হয়।

সোহরাওয়ার্দী ‘উদ্যানের গাঁজার সম্রাটখ্যাত' ছাত্রনেতা আক্তারুল করিম রুবেলকে ঢাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি চাঁদা চেয়ে মারধরের ঘটনায় ২০২১ সালের ২৮ জুলাই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। তাকে পদায়ন করতে  পদ দেওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে করা বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। 

শুধু তাই নয়, ছিনতাইয়ের অভিযোগে শাহবাগ থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে কয়েকমাস জেল খেটে বের হয়ে রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়া নূর উদ্দীন আহমেদও পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতির পদ।

এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা সেবন এবং উদ্যানের গেটে খাবারে হাত ধোয়ার পানি ফেলার মতো তুচ্ছ ঘটনায় দুইজন সিনিয়রকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে অভিযুক্ত  বিতর্কিত নেতা মেহেদী হাসানও পেয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদ। 

২০২৩ সালের ১১ জুন মুহসীন হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় শিবলি সাদিক। এ ঘটনার ছবি তোলায় এক সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনিও এ কমিটিতে স্কুল-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।

গত বছরের ৬ আগস্ট মেডিকেল মোড়ে দোকানে চাঁদাবাজি এবং দোকান কর্মচারীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তুলে নিয়ে মারধর, হুমকি ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ রয়েছে বেলায়েত হোসেন রকির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শহীদুল্লাহ হলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরমধ্যে রকি সৈকতের অনুসারী। তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীকে রাতভর পিটিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন ইউসুফ তুহিন। বর্তমান কমিটিতে কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তার নাম ঘোষণা হয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি  ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের ভ্রাম্যমাণ এক দোকান মালিকের কাছে চাঁদা চাওয়ার অডিও ক্লিপ ফাঁস হয় সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তানভীর হোসেন শান্তর। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির পদে আসতে উপাচার্যের নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগও রয়েছে। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে তানভীর হোসেন শান্ত নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন। 

ফজলুল হক মুসলিম হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জড়িয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন জিহাদুল ইসলাম। তাকে বর্তমান কমিটির উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক করা হয়েছে।

বিতর্কিত নেতাকর্মীদের পদায়নের বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জেল খাটার পর আদালত যদি কাউকে নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা দেয়, তাহলে আমরা তাকে অপরাধী  বলতে পারি না। তাছাড়া গত এক বছরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বর্তমানে তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। এজন্য আমরা তাদের ভালো কাজের পরিপ্রেক্ষিতে পদায়ন করেছি।

তিনি বলেন, তাছাড়া আমরা কোনো চাঁদাবাজিতে লিপ্ত, মাদকাসক্ত, বিরোধী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের হামলায় অভিযুক্তদের পদ দিইনি। হয়ত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে মাত্র, কিন্তু সেটা প্রমাণিত নয়। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কাউকে পদ বঞ্চিত রাখতে পারি না। আমরা আমাদের কথা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের নেতাকর্মীদের কাজের পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে পদায়ন করেছি।


সর্বশেষ সংবাদ