টাকা-পয়সার লোভ নুর বারবার প্রমাণিত করেছে: রেজা কিবরিয়া

 নুরুল হক নুর ও ড. রেজা কিবরিয়া
নুরুল হক নুর ও ড. রেজা কিবরিয়া   © ফাইল ছবি

২০২১ সালে টাঙ্গাইলে গণঅধিকার পরিষদের অনুষ্ঠানে হামলার সময় দলটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের পুলিশ ভ্যানে নিরাপদ অবস্থান ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নুরের বৈঠক শেষে সরকারের নির্লিপ্ততাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। তার মতে, কে কার পক্ষে এটা পরে বোঝা যাবে। দিনে দিনে খবর বের হবে।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন রেজা কিবরিয়া।

গণঅধিকার পরিষদের চলমান সংকট প্রসঙ্গে ড. রেজা কিবরিয়া বলছেন, দলটা যুব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে বাঁচাতে নুরুল হক নুরের হাতে এই দলটাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ সেই এই চেতনাকে বিক্রি করেছে। ব্যবসা করেছে, নিজে ধনী হয়েছে।

দলটির সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপির টাকা পয়সার লোভ ও লেনদেনে অস্বচ্ছতা নিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, টাকা পয়সার প্রতি লোভটা বারবার সে প্রমাণিত করেছে। আমরা মনে করি ভবিষ্যতে এই দলটাকে যদি কোথাও পৌঁছাতে হয়, নুরুল হক নুর সঙ্গে থাকলে এটা হবেনা। নুর আমার ওপর রেগে গেছে দুই কারণে। একটা হলো টাকা-পয়সা লেনদেনের স্বচ্ছতায় ওর কিছু সমস্যা আছে। এটা অনেক আগে থেকেই। ২০১৮ সালের আন্দোলনে ওর সঙ্গে যারা ছিল তারা জানে টাকা পয়সার ব্যাপারে ওর স্বচ্ছতার অভাব আছে।

রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের সঙ্গে কাজ করতে চাইনা। আমি বিদেশি দালালদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে আসিনি। গণঅধিকার পরিষদকে সব ধরনের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব থেকে রক্ষা করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রাখতে আমি বদ্ধ পরিকর। দলের অর্থনৈতিক লেনদেনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

নুরের ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোসাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কী—এই প্রশ্ন করা হলে নুর তার পরিষ্কার উত্তর দেয়নি। একটা মিটিং সম্পর্কে আমরা জেনেছি। সেই মিটিংয়ে যারা তাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছে দুবাইতে। তারা আমাকে কনফার্ম করেছে। মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুর মিটিং করেছে। একটা স্টারবাকসে। দুবাই ও শারজার মাঝখানে একটা যায়গায় থেমে সে মিটিং করেছে। এটা সুপরিকল্পিত একটা মিটিং। এ মিটিং করে সে কি পেয়েছে আমাদের তা জানা নেই। এখানে কী টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু নুর বলেছে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

দেশে যখন সে ফেরত আসলো তাকে কিছু করা হলো না। এটাতে আমাদের সন্দেহ জাগলো। যেখানে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী মেন্দি সাফাদির সঙ্গে একটা কনফারেন্সে দেখা করে শুধু ছবি তুলেছিলেন। সেই অপরাধে এখনো তিনি জেলে আছেন। সেখানে নুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না। সে কার জন্য কাজ করছে, যে এই ধরনের প্রটেকশন তার আছে। এ রকম প্রকাশিত অপরাধে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি—বলেন রেজা কিবরিয়া।

তার মতে, টাঙ্গাইলের আক্রমণের সময় নুর পুলিশি হেফাজতে, পুলিশের গাড়ির মধ্যে বসে ছিল। পুলিশ তার অনেক যত্ন নিয়েছে এটা খুব ইন্টারেস্টিং। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার, পুলিশ ও ডিজেএফআইয়ের সঙ্গে নুরের কী সম্পর্ক এটা নিয়ে অনেক সন্দেহ মানুষের আছে।

নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে কিবরিয়া বলেন, কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমার মনে হয় কথা বলা দরকার। আরেকজন অনেক কথা বলছেন, এরা অনেক মিথ্যাচার করছে। এগুলোর প্রতিবাদে অনেক কিছু বলা দরকার।

তিনি বলেন, দেশের জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন। এটা অনেকেই জানেন। আমি নিজে বড় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। আমার বেতনের পরিমাণ নির্বাচন কমিশনের স্টেটমেন্টে পাবেন। নুর অভিযোগ করেছেন আমি ৩ লাখ টাকা বেতনে ইনসাফ কায়েম কমিটির হয়ে কাজ করেছি। এটা হাস্যকর। আমি রোজগার করেছি ৩৯ বছর। নুরুল হক নুর কতদিন করেছে হালালভাবে এই হিসাবটা তার দেওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দলের বিপদে কাজ করেছি জানিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, দলে টাকা দিয়েছি সাধ্যমতো। আমি ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা পাইনা। সে জন্য দলের জন্য এত টাকা আমার পক্ষে খরচ করা সম্ভব না। টাঙ্গাইলে সেদিন আমি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি যে কর্মীদের জন্য রিস্ক (ঝুঁকি) নিতে রাজি আছি সেটা প্রমাণ করেছি। ইনসাফ কায়েম কমিটিসহ যেকোনো সরকারবিরোধী সভায় আমি থাকতে রাজি আছি।

তিনি বলেন, আমি বিএনপির মিটিংয়ে যাই, এবি পার্টির মিটিং এ সরকারবিরোধী বক্তব্য রেখেছি। ইসলামী আন্দোলনের মিটিং এ সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছি। আমি অনেক দলের মিটিংয়ে গেছি। ওই গুলো নিয়ে তো কেউ উচ্চারণ করেনা।

বিএনপিকে আমি ভাঙতে চাই। এটা নুর বলে বেড়াচ্ছে। বিএনপি ভাঙা নিয়ে আমি কাজ করিনা। আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমার কোনো লাভ নাই। বিএনপি ভাঙলে লাভ হবে আওয়ামী লীগের। আমি আওয়ামী লীগকে কোনো সহযোগিতা করতে চাইনা। বিএনপি শক্তিশালী থাকুক, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিক আমি সেটা চাই। কে কার পক্ষে এটা পরে বোঝা যাবে। আপনারা নিজেরাই দেখতে পাবেন। দিনে দিনে খবর বের হবে বলেও জানান তিনি।

আগামীতে দলটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। সকল কার্যক্রমে ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে, দলীয় গঠনতন্ত্রকে প্রাধান্য দিবো। এক মাসের মধ্যে উচ্চতর পরিষদ গঠন হবে। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। দলের সংকট নিরসনে গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্বিঘ্নে তদন্ত কাজ পরিচালনায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবো। কমিটিকে পূর্ণ নিরপেক্ষতার সহিত প্রতিবেদন দেওয়া আহ্বান জানাই। উক্ত কমিটির যেকোনো সুপারিশ আমি সাদরে গ্রহণ করবো।


সর্বশেষ সংবাদ