নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

মিছিলে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি, রক্তাক্ত ছাত্রলীগ কর্মী

হামলায় রক্তাক্ত ছাত্রলীগ কর্মী
হামলায় রক্তাক্ত ছাত্রলীগ কর্মী  © টিডিসি ফটো

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মিছিলে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়। এতে হামলা চালানো হয় ছাত্রলীগের এক কর্মীর ওপর। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই কর্মীকে ত্রিশাল উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আশংকা মুক্ত রয়েছে বলে জানায় প্রশাসন। 

আজ শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১৬ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। আহত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম তাওহিদ আহম্মেদ ওরফে ডায়মন্ড। তিনি নাট্যকলা বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের বিজয় দিবসের র‍্যালিতে মাসুদ নামের এক শিক্ষার্থীকে যাওয়ার জন্য বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী ডায়মন্ড। একপর্যায়ে মাসুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ডায়মন্ডের। যা পরবর্তীতে মারামারিতে রূপ নেয়।

জানা যায়, দুপুরে জুমার নামাজের সময় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের একুশে ব্লকের ৪র্থ তলার ৪১৬ নাম্বার কক্ষে ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ডায়মন্ডের ওপর হামলা চালায় পাশের রুম ৪১৭ নাম্বার কক্ষে অনিবন্ধিত অবস্থায় থাকা মাসুদ নামের শিক্ষার্থী।

আরও জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (২য় বর্ষ) একটি গ্রুপ এ হামলা চালায়। পরে হামলার স্বীকার রক্তাক্ত ডায়মন্ডকে ত্রিশাল উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমানে ডায়মন্ড আশংকা মুক্ত রয়েছে বলে জানায় হল প্রশাসন। 

এদিকে হামলাকারীরা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বাইরের বলে জানায় হল সূত্র। যার সত্যতাও পাওয়া গেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মন্তব্যে। তবে এ হামলাকে পরিকল্পিত বলেছে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিটন মাহমুদ অপু। 

তিনি বলেন, হামলার ঘটনা শুনে আমি দৌঁড়ে এসেও থামাতে পারিনি। ২০-৩০ জন ডায়মন্ডের রুমের দরজা ভেঙ্গে হামলা চালায়। নামাজের সময় থাকায় দ্রুতই তারা পালিয়ে যায়। ডায়মন্ডের সঙ্গে সকালে এদের কথা কাটাকাটি হলেও ডায়মন্ড সরি বলে চলে আসে। এরপরও একজন সিনিয়র শিক্ষার্থীর উপর এমন হামলা প্রত্যাশিত নয়। বিজয় দিবসের মিছিলের কথা বলা কি খুব অন্যায় হয়ে গেছে নাকি? দ্রুতই এদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। 

তবে কারা হামলা করেছে তাদের নাম বলতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবস আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। এটিও সেই ঘটনারই অংশ কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে এ বিষয়ে। ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। 

বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, হামলার খবর শোনা মাত্রই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্টসহ শিক্ষার্থীর উপর এমন হামলা প্রত্যাশিত ছিলো না। দ্রুতই তদন্ত করে হামলায় জড়িতদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে ঘটনা স্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী বলছে কেবল মিছিলে যাবার ঘটনা নয় পূর্বের কোন ব্যক্তিগত ঝামেলাও থাকতে পারে এই হামলার পেছনের কারণ হিসেবে। 

অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বাইরে থাকা নেতাদের অনুসারীরাই এই হামলা করিয়েছে বলে দাবী বর্তমান কমিটির বিভিন্ন কমিটিতে থাকা শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, এরা ছাত্রলীগের কেউ না। এরা দুষ্কৃতিকারী। এমন হামলা আমরা মেনে নেবো না। প্রশাসনকে আমরা জানিয়েছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তবে এটা কোন ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব না। প্রশাসনকে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, এটা সিনিয়র-জুনিয়রের ঝামেলা। আর একটা হলে কখনো এমন পরিবেশ থাকতে পারে না যে হলে হামলা হবে। আর তারা যদি ছাত্রলীগের হতো তাহলে তো তারা মিছিলেই আসতো। তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাই। 

হামলার স্বীকার তাওহিদ আহম্মেদ ডায়মন্ড বলেন, নামাজের জন্যে বের হবো তখনই আমার উপর ২০-৩০ এসে হামলা চালায়, রুমে থাকা টাকা নিয়ে যায় আর ল্যাপটপ ভেঙ্গে ফেলে। আমি এর বিচার চাই।
 
তবে হামলা করার অভিযোগটি সত্য কিনা জানতে মাসুদ নামের শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে সঙ্গীত বিভাগের সেই শিক্ষার্থীর হলে আবাসিক এলোটমেন্ট না থাকলেও অবৈধভাবে থাকছে। তার সঙ্গে ঘটনার দ্বন্দেই বর্তমান নেতৃত্বের বাইরের আরেকটি ছাত্রলীগের অংশ সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়। 

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ঘটনা ঘটার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই। আমরা ঘটনার স্থান সিলগালা করে রেখেছি। এখন পর্যন্ত আমরা শনাক্ত করতে পারিনি কারা করেছে। তবে কিছু নাম শুনেছি যাদের বিষয়ে শিক্ষার্থীরাই অভিযোগ জানিয়েছে। তদন্ত শেষে আমরা তা বলতে পারবো। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি শোনা মাত্রই তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। যাদের দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। সেটি পেলেই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এমন দিনে এমন বিশৃঙ্খলতার বিষয়ে কোন প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আজ হলের শিক্ষার্থীদের জন্যে কিছু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করলাম আর এদিনই এমন হয়। এই পরিবেশের সৃষ্টি এই ক্যাম্পাসে হতে দেয়া যাবে না। এই প্রশাসন কঠোর হতে হলে হবে কিন্তু এসব মানবে না।


সর্বশেষ সংবাদ