বাবা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, ছেলে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা

মাহমুদুর রহমান আলিফ
মাহমুদুর রহমান আলিফ  © টিডিসি ফটো

টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার বিএনপির সহ-সভাপতি শফিউর রহমান মুক্তার ছেলে মাহমুদুর রহমান আলিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগের একটি আবাসিক হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। গত ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের ২০৭ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ৭নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তার নাম রয়েছে। 

আলিফ ওই হলের ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপি নেতার ছেলে ঢাবিতে ছাত্রলীগে পদ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাছাড়া আলিফের বিরুদ্ধে গত রমজান মাসে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট থেকে টাকা না দিয়ে পাঞ্জাবি নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিলো।

আলিফের পদ পাওয়ার খবরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার মো. শাহজাহান লেখেন, রাজাকারের বংশধরগণ যদি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয় তাতে কি আমার মত আওয়ামী পরিবারের সন্তানের অন্তর জালা হবে না? নির্মমতা কত দূর হলে ছাত্রলীগ হবে নিলর্জ্জ? বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।

এ বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, তারা বাবা প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা বিএনপির পদে ছিলেন, এখন তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন। তাছাড়া তার দাদাও রাজাকার ছিলেন না। আঞ্চলিক বিভক্তির কারণে অন্য দল তার বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যেই ছেলে স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় তাকে তো আমরা অবহেলা করতে পারি না। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, আলিফ প্রথম বর্ষ থেকেই হল ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তার সাংগঠনিক দক্ষতা বা ছাত্রলীগের আদর্শের বিপরীতে কিছুই দেখিনি। তাছাড়া তার ব্যাপারে টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি ছোট মনির সুপারিশও করেন। আমরা তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তার সত্যতা নিশ্চিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাকা না দিয়ে পাঞ্জাবি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটা ভিত্তিহীন সংবাদ ছিলো, এর কোনো সত্যতা নেই। তারা ঢাবির ছাত্র হিসেবে কিছু ছাড়ে নিয়েছে, বিনামূল্যে বা জোরপূর্বক নেয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে মাহমুদুর রহমান আলিফের সাথে কথা বলতে চাইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. শাহজাহান বলেন, রাজাকারের বংশধরেরা যেখানে ছাত্রলীগের এত গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব পাচ্ছে সেখানে আমাদের জাত আওয়ামী পরিবারের সন্তানেরা অবহেলিত। তাছাড়া তার বাবাও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। কিভাবে হল শাখা  ছাত্রলীগের নেতারা আলিফের পারিবারিক অবস্থা না জেনে এত বড় পদ দিলো আমার জানা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর দেওয়া ঘাটাইল উপজেলার বিএনপি নতুন কমিটিতে ১নং সহ-সভাপতি হিসেবে আলিফের বাবা শফিউর রহমান মুক্তার নাম রয়েছে। তাছাড়া নিজ ইউনিয়ন আনেহলার সর্বশেষ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চেয়াম্যান পদেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও শেষ মুহুর্তে প্রত্যাহার করেছিলেন মুক্তা।


সর্বশেষ সংবাদ