তরুণদের ভাবনায় বিজয় দিবস

তরুণদের ভাবনায় বিজয় দিবস
তরুণদের ভাবনায় বিজয় দিবস  © টিডিসি ফটো

ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্রে বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বিজয়। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বড় অংশই ছিলো তরুণ। তরুণরা দেশপ্রেমিক হলে তবেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে কেমন বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছেন তরুণরা এবং একইসাথে তাদের বিজয় ভাবনা তুলে ধরেছেন যোবায়ের ইবনে আলী...

কষ্টার্জিত এই বিজয় আমাদের অস্তিত্ব:
ডিসেম্বর অহংকার আর গৌরবের মাস, আমাদের বিজয়ের মাস। আমাদের লাল সবুজের পতাকায় সবুজের মাঝে লাল বৃত্তের মাহাত্ম্য। যুদ্ধকালীন আমাদের অগ্রজরা ছিলেন আমাদের মতোই তরুণ। তাঁদের মধ্যে কাজ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা দেশপ্রেম। আসলে সেই সময়টাই ছিল ওই রকম। তরুণদের যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়ে শাহবাগে মিলিত হওয়াই বলে দেয়, শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। তারা দেশকে নিয়ে ভাবছে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছে। সমবেত কণ্ঠে গাইছে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"তবে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদমুক্ত যেদিন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হব, সেদিনই শহীদদের সোনার বাংলার স্বপ্ন সত্যি হবে। কষ্টার্জিত এই বিজয় আমাদের অস্তিত্ব এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

নাযিল হাসান তারেক, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশমাতৃকার সেবাই হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার:
আমাদের গর্ব, আমাদের মহৎ অর্জন আমাদের স্বাধীনতা। একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করেছিলাম চূড়ান্ত বিজয়। পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়েছিল দেশ। আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। আমাদের প্রতি পাকিস্তানিদের যে আচরণ, তা ছিল অন্যায়।

যে বিজয়ের জন্য সাত কোটি বাঙালিকে বেছে নিতে হয়েছিল সংগ্রামের পথ, যে লাল-সবুজ পতাকা অর্জিত হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, যে মানচিত্রের জন্য দুই লাখ মা-বোনকে দিতে হয়েছে সম্ভ্রম, তার মর্যাদা রক্ষা করা মহান ও পবিত্র দায়িত্ব তরুণদের। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বিজয়ের মাসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য নিজেকে তৈরি করা।

আদনান ওয়াহিদ আসিফ, শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

তরুণরা আগামী দিনের পথ চলার শক্তি:
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আমাদের তারুণ্য। যুগে যুগে বিভিন্ন সংগ্রামে তারুণ্যের অংশগ্রহণ ছিল। তারুণ্যের কোন বয়স নেই, নেই স্থান-কাল-পাত্রভেদ।ইতিহাস সাক্ষী বিভিন্ন সংগ্রামে তারুণ্যের অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন সংগ্রামে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি হচ্ছে তরুণ। এ তরুণরা আমাদের গর্ব এবং আগামী দিনের পথ চলার শক্তি।একাত্তরে আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি আজ আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটিরও বেশি। সঠিক মেধা এবং সাহস এর মাধ্যমে এই তরুণরাই পারে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। যেখানে থাকবে না কোন দুর্নীতি,নেতা নিবেন সঠিক সিদ্ধান্ত এবং জনগণ পাবে সঠিক শাসন।
লক্ষ্য হবে সুদৃঢ় ও গড়তে হবে উন্নত বাংলাদেশ।

প্রতিভা জাহান নিপা, শিক্ষার্থী, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা।

বিজয় অর্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া:
বিজয়ের স্মৃতিচারণ আমাদের তরুনদেরকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। আমাদেরকে শেখায়- যে জাতি জমি কর্ষণ করে ভাত খেত আর খাল বিল থেকে মাছ ধরে খেত সে জাতিও নিজের অধীকারের জন্য লড়তে জানে। ৭১ এ আমরা হয়ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি কিন্তু যে কীট সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিল সেগুলোর বিরুদ্ধে এখনো বিজয় অর্জন করেছি কিনা- ভেবে দেখতে হবে। হয়ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি বিজয় আমাদের এসেছে, কিন্তু বিজয়ের পূর্ণতা এখনো বাকি রয়েছে। বিজয় অর্জন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক কিছু এখনো পাইনি। ৭১ এর ক্রান্তিকালীন সময়ে তরুন যুবকরা ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে; এই নতুন ক্রান্তিকালীন সময়ে আবারো অন্যায় এবং দূর্নীতির যুদ্ধে নামতে হবে সবার। এই হোক তরুনদের অঙ্গীকার।

জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ