রক্তদানের নেশা প্রাথমিক শিক্ষক হুমায়ুনের, ৪১ বছরে দিয়েছেন ৫১ বার
- মামুন হোসেন, ভোলা
- প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ১১:০০ AM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১১:০৩ AM
ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীর স্বরবর্ণ। তিনি লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের হাজী রশীদ আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরউমেদ এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টারের ছেলে।
হুমায়ূন কবীর স্বরবর্ণের এখন বয়স ৪১। রক্তদান করাই যেন নেশা এ শিক্ষকের। এ পর্যন্ত তিনি ৫১ বার স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের রোগীকে রক্তদান করেছেন। এছাড়াও তিনি সোশ্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ব্লাড ডোনেশন (এসএসবিডি) নামে একটি সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করছেন। যার মাধ্যমে শত শত মানুষের রক্তের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন হুমায়ুন কবীর (স্বরবর্ণ)।
তিনি বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ ‘এ পজেটিভ’। আমার রক্তদানের শুরু ২০০২ সাল থেকে। তখন ভোলা সরকারি কলেজে বাংলা বিষয় নিয়ে অনার্সে অধ্যয়নরত। কলেজের রোভার স্কাউটে যোগ দেওয়ার পর থেকে রক্তদানে আরও উৎসাহী হই। এরপর ভোলা জেলার সিনিয়র রোভারমেট হিসেবে দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালন করার সুবাদে ভোলা জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিজেও রক্ত দিই এবং রক্ত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করি। যা এখনও চলমান রয়েছে।
হুমায়ুন কবীর বলেন, এ পর্যন্ত ৫১ জনকে রক্ত দিয়েছি। যাদের রক্ত দিয়েছি তাদের মধ্যে আছেন- ডেলিভারি, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, রক্তশূন্যতা ও দুর্ঘটনায় আহত রোগী।
স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে আত্মতৃপ্তি পান প্রাথমিকের এ শিক্ষক। তিনি জানান, আমার দেওয়া রক্তে একটি পরিবারের মুখে হাসি ফুটছে, বেঁচে যাচ্ছে একটি জীবন। এর চাইতে বড়প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না। তাই যতদিন রক্তদানের সুযোগ থাকবে, ততদিন স্বেচ্ছায় অসহায় রোগীদের রক্ত দিয়ে যাবো।
শিক্ষক হুমায়ুন একাই শুধু রক্ত দিচ্ছেন না, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করছেন রক্ত দিতে। এজন্য তিনি একটি সংগঠনও খুলেছেন। তিনি নিজে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি এ সংগঠনের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করে যোগান দিচ্ছেন চাহিদাসম্পন্ন গ্রুপের রক্তের।
তিনি বলেন, সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে নিজ এলাকার স্থানীয় কিছু যুবকদের নিয়ে সোশ্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ব্লাড ডোনেশন (এসএসবিডি) নামে একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে রক্ত। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আমাদের এই সংগঠনেরও মানবিক কার্যক্রমগুলো চলমান থাকবে।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অতনু মজুমদার বলেন, যেহেতু আমাদের শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা ১২০ দিন পরপর পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই যেকোনো প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস পরপর রক্ত দিতে পারবেন। এই রক্তদানের মাধ্যমে অনেক সময় একজন রোগীর জীবনও বেঁচে যায়। তাই যারা রক্তদান করেন, তাদের এটি একটি নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ।