বাংলাদেশকে ‘নাকানিচুবানি’ খাওয়ান গজনফর, কে এই ক্রিকেটার?
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুবালিতে বাংলাদেশকে কে ‘নাকানিচুবানি’ খাওয়ান? একবাক্যে সবাই বলবেন আফগানিস্তানের তরুণ তুর্কি গজনফর? ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল চর্চা। ক্রিকেট মঞ্চে আবির্ভাবে তিনি যেন বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, অনেকদূর যাবেন, জয় করবেন ক্রিকেট দুনিয়া।
আফগানিস্তানের এই স্পিনারের পুরো নাম আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফর। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৬.৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৬ রানের বিনিময়ে ৬টি উইকেট নিয়েছেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই স্পিনার প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তার বোলিং নৈপুণ্যে কুপোকাত হয়েছেন তানজিদ তামিম, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। এতে ওয়ানডে ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৬ উইকেট নিলেন গজনফর।
বাংলাদেশকে মাটি ধরানো এই স্পিনার গজনফর আসলে কে? শুরুতে তিনি ছিলেন পেসার। টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে তার উত্থান। বল ঘোরাতে পারতেন, তাই কোচের পরামর্শে পেস বোলিং ছেড়ে হয়ে যান স্পিনার।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রংপুর রাইডার্সে রয়েছেন তিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সেও ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালে আইপিএল খেতাব জেতে কেকেআর। সেই দলের সদস্য ছিলেন গজনফর। আফগানিস্তানের আরেক স্পিনার মুজিব উর রহমানের পরিবর্ত হিসেবে এই গজনফরকে দলে নিয়েছিল কেকেআর। কিন্তু কেকেআর-এর হয়ে একটি ম্যাচও খেলেননি তিনি।
মুজিবের চোটের জন্যই নাইটরা দলে নিয়েছিল গজনফরকে। আফগানিস্তানও মুজিবের পরিবর্তেই দলে নেয় তাকে। অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে গজনফর চারটি ম্যাচে আটটি উইকেট নেন। এই পারফরম্যান্সের পরই জাতীয় দলে ডাক পান এই তরুণ স্পিনার।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে-তে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে গজনফরের। এমার্জিং এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় আফগানিস্তান। ফাইনালে শ্রীলঙ্কা এ দলকে হারায় আফগানরা। ফাইনালের সেরা প্লেয়ার হন গজনফর।
গজনফরের বোলিং স্টাইল অনেকটা মুজিবের মতোই। বৈচিত্র্যও রয়েছে। আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদি বলেন, ‘গজনফর দারুণ প্রতিভাধর। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ। আমাদের বেঞ্চে এরকম একজন প্রতিভাধর প্লেয়ারকে পেয়ে আমি সত্যিই দারুণ খুশি।’
গজনফর মূলত অফ স্পিনার। তবে ক্যারম বল, ব্যাক স্পিন, গুগলি ছাড়াও বল দুই দিকেই ইচ্ছেমতো বাক খাওয়াতে পারেন। এসবের সঙ্গে গতিবৈচিত্র্যও যোগ হওয়ায় নিজের দিনে তিনি খুব ভয়ংকর। অধিকাংশ সময় ব্যাটার তার বল বুঝতেই পারেন না। যার ফলে হুড়মুড় করে আউট হন বিপক্ষ দলের ব্যাটার।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও স্পিনেও দক্ষ মুশফিক যেমন গজনফরকে পড়তেই পারলেন না। ক্যারম বলের ফ্লাইটে পরাস্ত হয়ে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। মুশফিক স্পিনে কতটা দক্ষ তার একটি প্রমাণ হতে পারে, ২০১৫ সালের পর ওয়ানডেতে এই প্রথম স্টাম্পিংয়ের শিকার। এই তথ্য কিন্তু গজনফরের দক্ষতারও প্রমাণ। কতটা ভালো হলে মুশফিককে পরাস্ত করে ক্রিজ থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়!
ক্রিকেটে আগামীর ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই তরুণ ক্রিকেটারকে। খুব শীঘ্রই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাকে নিয়ে শুরু হবে কাড়াকাড়ি। কেননা অফ স্পিন ছাড়াও ক্যারম বল, ব্যাক স্পিন, গুগলি এমনকি বল দুই দিকেই ইচ্ছেমতো বাঁক খাওয়াতে পারেন তিনি। এতে আফগানদের বিপক্ষে রশিদ-মুজিব ছাড়াও নতুন অস্ত্রের বিপক্ষে প্রস্তুত থাকতে হবে ক্রিকেটারদের।