হত্যা মামলার আসামী হয়েও বিশ্ব রেকর্ড, দ্বিতীয় টেস্ট কী খেলবেন সাকিব?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৫ AM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪২ AM
হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। হত্যা মামলার আসামী হয়েও তিনি জাতীয় দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে আছেন। রাউয়ালপিন্ডিতে একটি টেস্ট খেলে জয়ও পেয়েছেন। ওই ম্যাচে সাকিবের পারফরম্যান্সও খারাপ না। গড়েছেন বিশ্বরেকর্ডও।
বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক এখন টাইগার অলরাউন্ডার। ৪৮২ ইনিংস হাত ঘুরিয়ে শিকার করেন ৭০৭ উইকেট। তাতেই পেছনে পেলেছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে। ৪৯৮ ইনিংসে বল করে ৭০৫ উইকেট শিকার করেন এই সাবেক কিউই স্পিনার। তাকে ছাড়িয়ে যেতে সাকিবের লেগেছে ৪৮২টি ইনিংস।
আরও পড়ুন : গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যা মামলার আসামি ক্রিকেটার সাকিব
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জেতা রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিবের অবদান ১ উইকেট আর ১৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট এবং ৩টি উইকেটই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম উইকেটটি ওপেনার আবদুল্লাহ শফিকের। এরপর নেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সৌদ শাকিল ও সবশেষে নেন নাসিম শাহর উইকেট।
একজন খুনের মামলার আসামি হয়েও টেস্ট ম্যাচ খেললেন সাকিব! হত্যা মামলার আসামী হয়েও সাকিব ফিল্ডিং করছেন, বোলিং করছেন, উইকেটও নিচ্ছেন। একজন আসামি স্বাধীনভাবে দৌড়াচ্ছেন মাঠে। আগে-পিছে পুলিশ নেই। হাতে হাতকড়া নেই। তার অবদান যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্জনে।
আরও পড়ুন : হত্যার আসামি সাকিবকে ক্রিকেট থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফেরাতে লিগ্যাল নোটিশ
তবে এ টেস্টে সবার নজর কেড়েছে মুশফিকুর রহিমের নান্দনিক ১৯১ রানের ইনিংস। সাদমান-মিরাজদের ফিফটিও দর্শকদের প্রশংসায় ভেসেছে। উইকেট সংখ্যায়ও এগিয়ে ছিলেন মিরাজ। সেখানে সাকিবের ৩ উইকেটের বিশেষ কিছু হয়ে ওঠার কোনো কারণ নেই। তাকে নিয়ে আলোচনার কোনো ক্রিকেটীয় সূত্রও নেই আপাতত।
তবে হত্যা মামলা দায়েরের পর দেশবাসীর মনে প্রশ্ন, ৩০ আগস্ট শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সাকিব কি খেলবেন? কারণ আইনের দৃষ্টিতে সাকিব এখন একজন খুনের মামলার আসামি। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট চলাকালেই ঢাকায় এক খুনের মামলায় আরও অনেকের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। তবে টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশ দলের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখে বোঝার উপায় নেই সাকিবকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : হত্যা মামলার আসামি সাকিব, ক্রিকেটীয় ভবিষ্যৎ কী?
খুনের মামলার আসামী হয়েও জাতীয় দলে থেকে সাকিবের টেস্ট ম্যাচ খেলার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। সাকিবের এ পরিস্থিতি নিয়ে বিসিবিকে আইনি নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, মামলার তদন্তের স্বার্থে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে সাকিবকে যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে অন্যদের সঙ্গে সাকিবের পার্থক্য হলো কঠিন পরিস্থিতিও তিনি দারুণভাবে সামলে নেন। তার পারফরমেন্স তাই বলছে।
সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশ দলের এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, সাকিবের নামে হত্যা মামলা হয়েছে, একটু তো চিন্তা থাকবেই। তবে এখানে দল তার কাছে পুরোটাই পাচ্ছে। ভেতরে কোনো দুশ্চিন্তা থাকলেও সেটার ছায়া সে দলে পড়তে দিচ্ছে না। সাকিব শতভাগ পেশাদার একজন ক্রিকেটার এবং এই পরিস্থিতিতেও আমরা পেশাদারি মানসিকতাই দেখছি। মাঠের খেলায় সে পুরোপুরি নিবেদিত প্রাণ। আর মানসিকভাবে সতীর্থরা তাকে খুব সমর্থন দিচ্ছে।
আরও পড়ুন : সাকিবের মামলা নিয়ে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার
এদিকে ক্রিকেটার মুমিনুল হক তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে গতকাল রবিবার দাবিও করেন, সাকিবের বিরুদ্ধে মামলাটি মিথ্যা। তিনি লিখেছেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে দেশের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেটে তার হাত ধরে এসেছে কত জয়! সেই মানুষটা এখন মিথ্যা মামলার আসামি!
গার্মেন্টসকর্মী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সাকিব ভাই তখন কানাডায় খেলছিলেন। দেশেও ছিলেন না লম্বা সময়। তবে এমন ঘটনা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।
যে ছাত্র-জনতার রক্তে নতুন বাংলাদেশ দেখলাম, সেই বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করে হয়রানি অপ্রত্যাশিত। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশে সবাই ন্যায়বিচার পাবে।
তবে আইনের চোখে তো সাকিব আসামি। টেস্টের মাঝামাঝি সময়ে মামলা হয়েছে বলে প্রথম টেস্টটা না হয় খেলে ফেলেছেন। কিন্তু পরের টেস্টের দলে কি তাকে রাখা হবে ?
সম্প্রতি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রথম টেস্ট শেষে তারা সাকিবকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে সাকিবের খেলা নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।
রাওয়ালপিন্ডিতেই পরের টেস্টে জিতলে বা ড্র হলেই সিরিজ বাংলাদেশের। তার আগে সাকিবকে নিয়ে বিসিবি কী সিদ্ধান্তে আসে সেটাই দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।