ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ইনিংসে প্যাট কামিন্স চাপা পড়া নায়ক

ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ইনিংসে প্যাট কামিন্স চাপা পড়া নায়ক
ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ইনিংসে প্যাট কামিন্স চাপা পড়া নায়ক  © সংগৃহীত

চলমান বিশ্বকাপে গতকাল অকল্পনীয় এক ইনিংস খেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এটাই কি ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ইনিংস? অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যিনি উইকেটের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের তাণ্ডব দেখেছেন, তিনি অন্তত নিশ্চিত। এটাই ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ইনিংস। তবে ম্যাক্সওয়েলের রানের অপরাজিত ইনিংসে প্যাট কামিন্স যেন আড়ালে পড়া চাপা নায়ক। 

এভাবেও ম্যাচ জেতা যায়! ৪৯ রানে চার উইকেট হারানোর পর ক্রিজে নেমেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তার পরেও ১০০ রানের মধ্যে আরও তিন উইকেট পড়েছে। কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি তিনি। তাঁকে সঙ্গে করে প্যাট কামিন্সও হয়েছেন সেই ইতিহাসের শরিক।

গতকাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ইব্রাহিম জাদরানের শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানের বড় সংগ্রহ পায় আফগানরা। বিশ্বকাপে এর আগে কখনোই এতো রান তাড়া করে সফল হয়নি অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮৭ রান তাড়া করা ছিল তাদের আগের সর্বোচ্চ। 

বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করা ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত থাকেন ১২৮ বলে ২০১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে। ইনিংসটি তিনি সাজান ১০টি ছক্কা ও ২১টি চারে। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ওয়ানডেতে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাটিং করে বীরোচিত এক ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে তুললেন এই ব্যাটার। 

ইনিংস শেষে ২০১ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৬৮ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন প্যাট কামিন্স। ম্যাক্সওয়েল যখন ইনজুরিতে, তখন বারবার এগিয়ে এসে সাহস দিয়েছেন এই অজি অধিনায়ক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিকার অর্থে কামিন্স কোন অংশেই কম ছিলেন না। 

দলকে জেতানোর তাগিদ এতটাই ছিল যে, ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে এক পায়ে চোট লাগার পরেও মাঠ ছাড়েননি। বরং সেই ব্যথা নিয়েই, খোঁড়াতে খোঁড়াতে ব্যাট করে গেলেন টার্গেটে না পৌঁছনো পর্যন্ত। আর উল্টোদিকে সেই ম্যাক্সওয়েলকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলার প্যাট কামিন্স।

দলের অবস্থা এমনই ছিল যে, আরও উইকেট পড়লেই সব প্রায় শেষ! ম্যাক্সের এই লড়াইয়ের কোনও মর্যাদাই থাকত না। তাই পরিস্থিতি বুঝে টিকে থাকলেন কামিন্সও। কামিন্সকে সঙ্গে নিয়েই শেষ পর্যন্ত এক পায়ে খুঁড়িয়ে এবং ব্যাট হাতে যুদ্ধ চালালেন ম্যাক্সওয়েল।

আর কামিন্সও সুযোগ বুঝে কখনও স্ট্রাইকিংয়ে, আর বেশিরভাগ সময় নন স্ট্রাইকিংয়ে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন। তাই আজকের এই ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব যতটা ম্যাক্সের, ঠিক ততটাই কামিন্সেরও।

4df1e88c-1274-49e3-85d3-d4d6a92aed48

যে রশিদ খান, নাভিন উল হককে সামাল দিতে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার হিমশিম খেয়েছে, তাদের বিপক্ষেই যেন মাটি কামড়ে ছিলেন কামিন্স। বিশেষ করে রশিদ এবং মুজিবের স্পিনে বারবার পরাস্ত হতে হয়েছে তাকে। তারপরেও সাবধানী ইনিংসে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। ম্যাক্সওয়েল ক্যাচ উঠিয়েছিলেন একবার, কামিন্স সেই ভুলটাও করেননি। 

পেশির টান, প্রবল আর্দ্রতা আর ক্রমবর্ধমান চাপকে হার মানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জিতিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। যা দেখে কামিন্স বলছেন, 'কী বলব, অবিশ্বাস্য। আমি জানি না কীভাবে এই ইনিংসকে ভাষায় ব্যাখ্যা করব। দারুণ জয়। তবে ম্যাক্সি (দলে ম্যাক্সওয়েলের ডাকনাম) অন্য গ্রহের। ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ইনিংস। 

ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে রান তাড়া করতে নেমে এটি কোনও ব্যাটারের সর্বকালের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ফখর জামানের ১৯৩ রানের রেকর্ড ভাঙলেন ম্যাক্সওয়েল। এর সুবাদেই অস্ট্রেলিয়া চলতি বিশ্বকাপে ছয়ে ছয় করে ফেলল। 


সর্বশেষ সংবাদ