রোনালদোদের কান্নার বিদায়

নয়ন জলে নক্ষত্রের বিদায়
নয়ন জলে নক্ষত্রের বিদায়   © সম্পাদিত

ক্যারিয়ারে একটি মাত্র অপূর্ণতা। যা ঘোঁচাতে পঞ্চমবারের মতো চেষ্টায় নেমেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবারও পারলেন না। আবারও সেই একই গল্প। মরক্কোর কাছে ১-০ গোলে হেরে কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেলো পর্তুগাল। একইসঙ্গে থেমে গেলো রোনালদোর বিশ্বকাপ স্বপ্নও। আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো যখন উল্লাস করছে তখন ক্যামেরার লেন্স রোনালদোর দিকে। টানেল দিয়ে হনহন করে ছুটছেন, সঙ্গে একজন নিরাপত্তারক্ষী। তার কান্না যেন থামছিলই না। 

বয়সের কোটা এখন ৩৮ ছুঁইছুঁই। লম্বা ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন অনেক কিছুই। আরেকটি বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বেশ কয়েকটা সাক্ষাৎকারে এর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। 

রোনালদো হয়তো নিজ থেকেই জানতেন, এটাই তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। তাই তো মরক্কো ফুটবলার যখন উল্লাস করছিলেন, তখন কাঁদতে কাঁদতেই ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটতে দেখা গেলো তাকে। কোনোভাবেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলেন না। 

আল থুমামা স্টেডিয়ামে খেলার শুরুতেই রোনালদোকে ফের বেঞ্চে দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরির কণ্ঠে তখন শোনা যাচ্ছিল, ‘লিওনেল মেসি বিশ্বকাপে আছেন, রোনালদোও বিশ্বকাপে আছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে রোনালদো কেবলই দর্শক।

ম্যাচের ৫১ মিনিটে অবশ্য রোনালদোকে মাঠে নামান পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। ততক্ষণে ১-০ গোলে পিছিয়ে পর্তুগাল। কিন্তু ৪৮ মিনিট খেলেও পর্তুগালকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেননি রোনালদো। পারেননি নিজের বিশ্বকাপ স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। আবারও সেই মাথা নিচু করেই ফিরতে হলো তাকে। এবার সত্যি সত্যিই কাতার বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে গেলেন এই ফরোয়ার্ড।

আন্তর্জাতিক পুরুষ ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের তকমা রোনালদোর। যিনি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন। ১৮ বছর ধরে দেশের জার্সিতে কতৃত্ব দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি।  যার নাম শুনলেই প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ডিফেন্ডারের কাঁপুনি হতো। যিনি গোলরক্ষকদের যমদূত ছিলেন তার কি বেঞ্চে থাকা মানায়? রোনালদোও মানতে পারেননি। 

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক জয়ের পর সেজদায় লুটিয়ে পড়লো মরক্কোর ফুটবলাররা

এই বিশ্বকাপ ছিল রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। হয়তো পর্তুগীজ জার্সিতে খেলে ফেলেছেন শেষ ম্যাচটিও। কে জানে রেফারির শেষ বাঁশির সঙ্গে দেশের জার্সিতে রোনালদোর দেরযুগের যাত্রাও থেমে। ২০০৩ সালে অভিষেকের পর থেকে তিনি দেশের হয়ে খেলেন ১৯৬ ম্যাচ। বিশ্বফুটবলে যা যৌথ রেকর্ড। শুধু তাই নয় সর্বোচ্চ ১১৮ গোলের রেকর্ডও তার।

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম আসরে (২০০৬) খেলতে নেমেই সেমিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু সেই সাফল্যকে বাকি চার আসরে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি পর্তুগাল। ২০১০ বিশ্বকাপে শেষ ষোলো, ২০১৪-তে শেষ ষোলো, ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্ব এবং ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা প্রজন্ম নিয়েও কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি এগোতে পারেনি পর্তুগিজরা।

রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে...। নাহ্, শেষটা রাঙাতে পারলেন না রোনালদো। কাতারে পতন ঘটল নক্ষত্রের। রোনালদোর বিশ্বকাপ থেকে এমন বিদায় হয়তো চায়নি কেউই। প্রতিদ্বন্দ্বী ভক্তদেরও হৃদয় কেঁপেছে এমন হাহাকার করা দৃশ্য দেখে।


সর্বশেষ সংবাদ