পরীক্ষা না দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া সেই দুই শিক্ষার্থীকে ফেল করাল বোর্ড

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড  © ফাইল ফটো

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এসএসসির এক বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়েই জিপিএ- ৫ পেয়ে পাশ করেছে দুই শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এ তথ্য জানাজানি হয়। এরপরই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এলাকায়। একটি বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকে কীভাবে তারা পাস করলো, তা নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের কর্তারাও রীতিমতো অবাক। এরপর তদন্তে নামে শিক্ষাবোর্ড। পরে আজ ফল পুনঃনিরীক্ষণে এই দুই শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হয়।

মঙ্গলবার (১১ জুন) চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে তাদের ফলা প্রকাশ হলে তাতে দেখা যায় ওই দুই শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হয়েছে।

এসএসসি ফলাফলে বাঁশখালীর ২৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম হয়েছিল চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়। পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও পাস করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।

গত ৮ জুন পরীক্ষা না দিয়েই জিপিএ-৫ পেল দুই শিক্ষার্থী, এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর তদন্তে নামে শিক্ষাবোর্ড।

জানা যায়, চলতি বছরে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এই দুই শিক্ষার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে।

পরীক্ষা ছিল না মনে করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি দুই পরীক্ষার্থী। পরে তারা কেন্দ্রে পৌঁছালেও ততক্ষণে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। এ ঘটনায় সেদিন পরীক্ষা দিতে না পারায় কেন্দ্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের গাফিলতি রয়েছে বলে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন।

শিক্ষাবোর্ডের কর্তারা বলছেন, ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় দুজনকেই তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র (বাঁশখালী-১) থেকে নম্বরপত্র পাঠানো হয়। একইভাবে অনুপস্থিত দুই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা না হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বীয় (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষায়ও সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে তাদের ৩.৫ পাইয়ে দেন বোর্ড পরীক্ষকরা।

এ বিষয়ে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব রতন চক্রবর্তী শিক্ষাবোর্ডকে জানিয়েছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার দিন ওই দুই শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। তারা সেদিন কেন্দ্রেও আসেননি। আমরা দুই শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির তথ্য পরীক্ষার দিনই বোর্ডে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী কীভাবে ৩.৫ পেল তা বুঝতে পারছি না।

এদিকে আজ মঙ্গলবার অনলাইনে দেখা যায়, চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফলে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দুই শিক্ষার্থী ফেল দেখানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এএমএম মুজিবুর রহমান বলেন, বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের একটা ভুলের কারণে এটা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করতে গেলে তো ভুল-ত্রুটি থাকে। এই বিষয়টি আমাদের শৃঙ্খলা কমিটিতে উঠবে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, ফল তৈরিতে কিছু ছোট ভুল ক্রটি হয়, তবে এ ধরনের ভুল খুবই মারাত্মক। এটা অমার্জনীয় কাজ। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বোর্ডের অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুযায়ী বোর্ড নিজে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।

 

সর্বশেষ সংবাদ