পরীক্ষা না দিয়েই তিন বিষয়ে ১০০ নম্বর পেয়ে শীর্ষে তারা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০২:০২ PM , আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ০২:০২ PM
এ বারে চারজনের হাতে সেরার নম্বর। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাসে যা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন ঘটনা। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের স্রোতশ্রী রায়, বাঁকুড়ার বড়জোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরব মণ্ডল এবং বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র অর্পণ মণ্ডল। শুক্রবার কলকাতায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, চার জনই ৫০০-এর মধ্যে পেয়েছেন ৪৯৯ নম্বর।
করোনা আবহে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে ক’টি পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই পুরো নম্বর দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। প্রকাশ করা হয়নি মেধা-তালিকাও। তবে দেখা যাচ্ছে, চার জন ছাত্রছাত্রী পেয়েছেন ৪৯৯। এটাই সর্বোচ্চ। এই চার জনের মধ্যে আর একটি মিল, প্রায় সকলেই এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন — ‘‘আশা করেছিলাম ভাল ফল হবে, কিন্তু এতটা ভাল হবে ভাবতে পারিনি!’’
শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী স্রোতশ্রী রায়। বাংলায় ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৯২, ইংরেজিতে পেয়েছেন ৯৯। আর বাকি অঙ্ক, ফিজিক্স, স্ট্যাটিস্টিকস এবং কেমিস্ট্রি-তে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ১০০। টেস্ট পরীক্ষার খারাপ ফলের পরে এই রেজাল্ট বেশ ভালোই হয়েছে বলে মনে করছেন স্রোতাশ্রী।
এরই মাঝে মন খারাপের কারণ ফিজিক্স, স্ট্যাটিসটিকস, কেমিস্ট্রি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। কারণ ওই তিন বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। ভাষা বিভাগ ছাড়া কেবলমাত্র অঙ্ক পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় ১০০ পেয়েছেন স্রোতাশ্রী। আর সেই নম্বরের ভিত্তিতেই গড়ে বাকি বিষ্যগুলিতেও নম্বর দেওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রথম হওয়ার খুশি সেখানেই কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছে। প্রথম হওয়ার আনন্দ। স্রোতাশ্রীর কথায়, “রেজাল্ট দেখে খুবই ভালো লাগছে। কিন্তু তিনটে পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সেই পরীক্ষা গুলো দিয়ে এই নম্বর পেলে আরও বেশি খুশি হতাম।”
মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল চুঁচুড়া হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ঐক্য ব্যানার্জি। এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর অর্থাৎ ৪৯৯ পেয়েছে ঐক্যও। তার বক্তব্য, ‘আশা ছিল ভাল ফল হবে, তবে এত ভাল হবে সেটা আশা করেনি।’ সমস্ত বিষয়ে ১০০ নম্বর পাওয়া ঐক্য ইংরেজিতে ১ নম্বর কম পেয়েছে। বাবা সমরেশ ব্যানার্জি কলেজিয়েট স্কুলে কাজ করেন। মা রেখা ব্যানার্জি সংসার সামলান। বাড়ি চুঁচুড়ার ষণ্ডেশ্বরতলা এলাকায়। পাদর্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে মহাকাশ গবেষণা করতে চায় ঐক্য। দিনে মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পড়েই এই ফল। ছবি আঁকা, কুইজ খুব ভাল লাগে তার।
বাঁকুড়া কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র, স্কুলের ‘ফার্স্ট বয়’, অর্পণ মণ্ডলও ৪৯৯ পেয়েছে। বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকায় তাদের বাড়ি। বাবা অসিতকুমার মণ্ডল শালতোড়া বিধানচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক। অর্পণ ডাক্তার হতে চায়। মাধ্যমিকে পেয়েছিল ৬৬৮। ছবি আঁকতে ভালবাসে। প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯৮, ইংরেজি ৯৯, অঙ্ক ১০০, পদার্থবিজ্ঞান ১০০, রসায়নবিজ্ঞান ১০০, জীববিজ্ঞান ১০০।
বড়জোড়া হাইস্কুলের মেধাবী ছাত্র, স্কুলের ‘ফার্স্ট বয়’ গৌরব মণ্ডলও ৪৯৯ পেয়েছে। গৌরবদের বাড়ি বড়জোড়ার মণ্ডলপাড়ায়। খবরটি ছড়িয়ে যেতেই গৌরবদের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড় জমে। গৌরবের বাবা সুবোধবাবু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। মা গৃহবধূ। গৌরব মাধ্যমিকে দশম হয়েছিল। এবার টেস্টে পেয়েছিল ৪৮০। ফাইনালে আর একটু বেশি আশা ছিল। পেয়েছে ৪৯৯। প্রত্যেকটি বিষয়ে একজন করে গৃহশিক্ষক ছিলেন। দৈনিক ৬–৭ ঘণ্টা পড়ত। চিকিৎসক হতে চায়। এই স্বপ্ন অনেকদিনের। তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯৪, ইংরেজি ৯৯, অঙ্ক ১০০, পদার্থবিদ্যা ১০০, রসায়নবিদ্যা ১০০, জীববিদ্যা ১০০।
করোনা আবহে মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকে দেশ জুড়ে জারি হয়ে গিয়েছিল লকডাউন। সেই সময়েই উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল। এই লকডাউনের কারণে উচ্চ-মাধ্যমিকের বহু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। পরে ওই বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে। করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় বিধি মেনেই পরীক্ষা নেওয়ার কথা হয়েছিল। যদিও তা আর সম্ভব হয়নি। (সূত্র: আনন্দবাজার, আজকাল)