অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাবেন যেভাবে
উন্নত জীবনযাত্রা, বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ—সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্টাডি ডেস্টিনেশন। দেশটির ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও পার্থে রয়েছে টপ-র্যাংকড বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে প্রতিবছর হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের সুযোগ আরও বিস্তৃত হয়েছে। সরকারি অনুদান, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্কলারশিপ, গবেষণা ভাতা—সব মিলিয়ে এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সুবিধা দিচ্ছে দেশটি।
১. অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ (Australia Awards)
অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ। টিউশন ফি সম্পূর্ণ ফ্রি, থাকার খরচ, বইপত্র ভাতা, স্বাস্থ্যবিমা, যাওয়া–আসার বিমান ভাড়া—সবকিছুই বহন করে সরকার। ২০২৬ ইন্টেকের গাইড ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশ, পাবলিক পলিসি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ডেভেলপমেন্ট–সম্পর্কিত বিষয়ে বাড়তি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
২. ডেস্টিনেশন অস্ট্রেলিয়া প্রোগ্রাম (Destination Australia Program)
রিজিওনাল ক্যাম্পাসে পড়লে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বছরে ১৫,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত স্কলারশিপ পাবেন।
কুইন্সল্যান্ড, তাসমানিয়া ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই স্কলারশিপ অফার করছে। অনেক ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত নবায়নযোগ্য এ স্কলারশিপটি।
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
৩. গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ–ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন
বিশ্বসেরা গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি। প্রতিবছর প্রায় ৬০০টি স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
সুবিধা:
*প্রথম বছরে ১০,০০০ AUD;
*টিউশন ফি রিমিশন;
*পুরো টিউশন ফি মওকুফ;
*গবেষণা ভাতা;
*স্বাস্থ্যসেবা;
আলাদা আবেদন প্রয়োজন নেই—ভর্তি আবেদনই স্কলারশিপ আবেদন হিসেবে গণ্য।
৪. ডেকিন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
ভিক্টোরিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। এবার দেবে ৪০০টিরও বেশি স্কলারশিপ।
সুবিধা:
*সম্পূর্ণ টিউশন ফ্রি;
*উপবৃত্তি;
*চিকিৎসা ভাতা;
*স্বাস্থ্যবিমা;
*গবেষণার জন্য অতিরিক্ত অনুদান;
*বিমান ভাড়া পর্যন্ত বহন করে;
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল-ফ্রি ১৬ স্কলারশিপ সম্পর্কে
৫. ইউনিভার্সিটি অব সিডনি–ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ (USyd ISRS)
আবেদন সারা বছরই খোলা থাকে। ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রামের ভিন্ন ডেডলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে নোটিশে জানানো হয়। রিসার্চ শিক্ষার্থীদের জন্য শীর্ষ ফান্ডিং স্কিম হিসেবে পরিচিত।
৬. রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম (RTP Scholarship)
অস্ট্রেলিয়ান সরকারের রিসার্চ স্কলারশিপ যেখানে মাস্টার্স (রিসার্চ) ও পিএইচডির জন্য বিশাল অর্থায়ন আছে।
সুবিধা:
*সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ;
*বছরে প্রায় ৩৩,০০০–৩৯,০০০ AUD স্টাইপেন্ড;
*গবেষণা খরচ;
*থিসিস ভাতা;
*ভ্রমণ ভাতা;
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই RTP অফার করে—ANU, CDU, UWA, Deakin, Flinders, Melbourne, Sydney-সহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান।
৭. অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ANU) স্কলারশিপ
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় অবস্থিত একটি পাবলিক রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়। কিউএস র্যাংকিং অনুযায়ী এটি অস্ট্রেলিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সর্বোচ্চ ৩৪,০০০ AUD/বছর প্রদান করে থাকে। যা সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত চলে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সম্পর্কে
৮. জন অলরাইট ফেলোশিপ (JAF)–নতুন জোর
কৃষি, পরিবেশ ও ডেভেলপমেন্ট–ফোকাসড গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেলোশিপ।
ACIAR-এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশের গবেষকেরা অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স/পিএইচডি করতে পারেন।
২০২৬ ইন্টেকে জলবায়ু অভিযোজন, কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
৯. তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
প্রতিবছর ১৫০টি বৃত্তি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। রিসার্চ ও কোর্সওয়ার্ক উভয় প্রোগ্রামের জন্যই আবেদনযোগ্য।
স্কলারশিপে যে সুবিধাগুলো সাধারণত থাকে
*১০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ;
*মাসিক স্টাইপেন্ড;
*গবেষণা ও থিসিস খরচ;
*যাওয়া–আসার বিমান ভাড়া;
*স্বাস্থ্যবিমা;
*পারিবারিক ভাতা (চাইল্ড অ্যালাউন্স);
*মাতৃত্ব/পিতৃত্ব ছুটি;
*কিছু স্কলারশিপে বাসস্থান ভাতাও রয়েছে;
আরও পড়ুন: জেনে নিন মধ্যপ্রাচ্যের ১১ স্কলারশিপ সম্পর্কে
যোগ্যতাসমূহ (সাধারণত যা লাগে)
*ব্যাচেলর ডিগ্রি (ভালো CGPA);
*ইংরেজি দক্ষতা (IELTS ৬.৫ /PTE ৫৮/TOEFL সমমান);
*রিসার্চ প্রোগ্রামে SOP + প্রপোজাল;
*সুপারভাইজার সম্মতি (অনেক প্রোগ্রামে বাধ্যতামূলক);
*টিউশন বা লিভিং খরচ চালানোর সক্ষমতার কাগজ;
*সামরিক চাকরিজীবীরা আবেদন করতে পারবেন না;
*কিছু ক্ষেত্রে ৩–৪ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা প্রয়োজন;
আরও পড়ুন: স্টুডেন্ট ভিসা রিফিউজড হচ্ছে যে পাঁচ ভুলে
আবেদন প্রক্রিয়া
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা স্কলারশিপের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালীন আবেদন ফর্মের সাথেই সরবরাহ করা থাকে।
অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর পরেই আসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার ব্যাপারটা।
আবেদনপত্রের অংশে যাবার আগে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় সব নথির আপলোড করে অনলাইনের আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে।
আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ই-মেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।
অস্ট্রেলিয়া শুধু উন্নত শিক্ষা নয়—গবেষণা, ক্যারিয়ার ও জীবনমান সব দিক থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রচুর সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্কলারশিপ একে সহজলভ্য করে তুলেছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে—কারণ অনেক স্কলারশিপে পুরো পড়াশোনা বিনা খরচেই, বরং মাসে মাসে স্টাইপেন্ডও দেওয়া হয়।