তওবা ও ইস্তিগফারে নাজাত নিশ্চিত করুন

  © সংগৃহীত

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মূলত ইসলামি অনুশাসনের অধীনস্থ হওয়া ছাড়া নাজাতের পথ নেই। অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন ও নবিজির সুন্নতের অনুসরণই নাজাতের একমাত্র পথ। চলছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। বিশেষত রমজানের শেষ দশক নাজাত বা মুক্তির। এ মাসের আমলগুলোর মধ্যে তওবা ও ইস্তিগফার গুরুত্বপূর্ণ। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, যারা রমজান পেল কিন্তু নিজেদের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, জাহান্নাম থেকে নাজাত পেল না।’ তওবা, ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। রমজান মাসে যে আমলগুলো বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাওয়া, জান্নাত কামনা করা, ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা, দরুদ শরিফ পাঠ করা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করতে থাকা।

তওবা
আরবি তওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা। পাপ থেকে পুণ্যের পথে, অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসা। কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র মাধ্যম তওবা। পারিভাষিক অর্থে খাঁটি মনে অতীতের সব গুনাহ থেকে ফিরে আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করাকে তওবা বলা হয়। 

তওবা সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে, ‘হে ইমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবহমান।’ (সুরা-৬৬ তাহরিম, আয়াত: ৮)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)। ‘(হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের সত্তার প্রতি সীমাহীন জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা-৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)।

ইস্তিগফার
ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের ভুল-ত্রুটির কথা স্মরণ করে ক্ষমা চাওয়া। ভুল-ত্রুটি না থাকলেও ক্ষমা চাওয়া সুন্নত। কেননা ইস্তেগফার পড়লেই আল্লাহ তাআলা খুশি হন। ক্ষমা চাওয়ার সবচেয়ে ছোটো বাক্য হলো আস্তাগফিরুল্লাহ। যার অর্থ ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ইমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।’ (সুরা তহা ৮২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা ১১০)

তওবা ও ইস্তিগফার করার দোয়া

‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ 

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন; এবং আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। (তিরমিজি, আবু দাউদ)। 

অথবা ‘আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি; লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।’ 

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার সব পাপের, আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই। (মুসলিম ও তিরমিজি)।

সায়্যেদুল ইস্তিগফার
সায়্যেদুল ইস্তিগফার বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার হলো ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত তু। আউযু বিকা মিন শাররি মা ছনাতু। আবুউ লাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বি-জাম্বি, ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।’ 

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার প্রভু, আপনি ছাড়া আর কেউ মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনারই বান্দা, এবং আমি যথাসাধ্য আপনার নিকট প্রদত্ত অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর বহাল থাকব। আমি যত মন্দ কাজ করেছি, ওই সবের কুফল থেকে বাঁচার জন্য আপনার আশ্রয় চাই। আমার ওপর আপনার যে অসংখ্য নেয়ামত রয়েছে, তার শোকর গুজারি করি এবং আমার পাপের স্বীকৃতিও প্রদান করি; অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন; গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা আপনি ছাড়া আর কারও নেই। 


সর্বশেষ সংবাদ