রমজানের শেষ দশকে করণীয়, হাদিসে যা আছে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:১৩ PM , আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৭ PM

পবিত্র রমজান ফজিলত ও বরকতপূর্ণ মাস। রমজানের শেষ ভাগ বা শেষ দশকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুন্নত ইতিকাফ, শবে কদর অনুসন্ধান, সদকতুল ফিতর আদায়, ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নত আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ। এখানে রমজানের শেষ দশকের এমন কিছু আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো—
ইতিকাফ
ইতিকাফ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘মনে কর সেই সময়কে, যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ করো। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।
মহানবী রাসুল (সা.) অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)
সদকাতুল ফিতর আদায়
ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে রমজানের শেষ দশকে বা শেষ দশকের আগে তা আদায় করা উত্তম। এতে অসহায় মানুষের জন্য সুবিধা। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েক দিন আগে ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু-এক দিন আগেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬)
আর নাফে রাহ. থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দুই-তিন দিন আগে ফিতরা উসুলকারীর কাছে সদকাতুল ফিতর পাঠিয়ে দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ৩১৬)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য সদকাতুল ফিতর প্রদান করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ)
শবে কদর অনুসন্ধান
রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদর অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)
শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ১-৩)
চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করা
প্রত্যেক মাসের চাঁদ দেখা, বিশেষ করে ঈদের জন্য চাঁদ দেখা সুন্নত। ২৯ রমজানে সবার উচিত নিজের সাধ্যমতো চাঁদ দেখার চেষ্টা করা।
চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৯)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও। (বুখারি)
ঈদের দিনের সুন্নত
হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব। রাসুল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং হেঁটে বাড়ি ফিরতেন। (ইবনে মাজাহ)।
রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরে নামাজের আগে খেজুর খেয়ে বের হতেন। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি)
ঈদের দিন সাহাবিরা দোয়াসুলভ বাক্যে সৌজন্য বিনিময় করতেন। তারা পরস্পর সাক্ষাতে বলতেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং তোমার আমলগুলো কবুল করুন। (ফাতহুল বারী)