অবৈধভাবে নেয়া উৎসব ভাতা ফেরত দিলেন বেরোবি রেজিস্ট্রার 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে বকেয়াসহ গত দুই ঈদের উৎসব ভাতা উত্তোলনের পর চাপের মুখে উত্তোলনকৃত অর্থ ফেরত দিয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) রেজিস্টার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী।

জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে দুই ঈদের উৎসব ভাতা বাবদ এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলন করেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী। উপাচার্য ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদের সাক্ষরে তাকে উক্ত টাকা প্রদান করা হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং  বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে এটির ব্যাখা চেয়ে গত ৩ জুলাই উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ব বিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশন। এসব সমালোচনার মুখে উৎসব ভাতা হিসেবে নেওয়া অতিরিক্ত প্রায় ১লক্ষ টাকা গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব বিদ্যালয় ফান্ডে জমা দিলেন বেরোবি রেজিস্ট্রার। 

বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব দপ্তর জানায়, উপাচার্যের অনুমোদন ক্রমে রেজিষ্ট্রারকে উক্ত উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত ৯১ হাজার ১৮৬ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে ফেরত দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রারকে কয়েকবার মুঠোফোনে দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

আরও পড়ুন: উপ-উপাচার্য নেই ৭৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সার্চ কমিটির সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরীকে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ স্বাক্ষরিত রেজিস্ট্রারের নিয়োগপত্রে ২ নং শর্তে উল্লেখ রয়েছে ‘‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী টাকা ৫৬,৫০০-৭৪,৪০০/- গ্রেড-৩ এর সর্বশেষ ধাপ ৭৪,৪০০/- টাকা মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪০%,মোবাইল বিল ১৫০০/- টাকাসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকালে মাসিক সর্বসাকুল্যে ১,০৫,৬৬০/- টাকা প্রাপ্য হবেন। ইহা ব্যতিত অন্য কোন ভাতাপ্রাপ্য হবেন না।’’

উক্ত নিয়োগপত্র অনুযায়ী ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আলমগীর চৌধুরী। কিন্তু ঈদুল আজহার আগে ব্যাংকে পাঠানো উৎসব ভাতার এডভাইসে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরীকে ঈদ উল ফিতরের বকেয়া ভাতাসহ দুইটি ভাতা বাবদ এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে, যা তাঁর নিয়োগ পত্রের ২ নং শর্তের স্পষ্ট লংঘন। এছাড়াও আর্থিক বিধি অনুসারে কোন চাকরিজীবীকে বকেয়া ভাতা প্রদানের কোন সুযোগ নেই। নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে অনিয়মের মাধ্যমে বকেয়াসহ উৎসবভাতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী।

এই উৎসব ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে ইউজিসির নির্দেশনাও অমান্য করা হয়েছিল।  বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থ পরিচালক মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত গত ২৫ মে এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘‘সরকারি বিধি অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত বিশ্ববিদ্যালয়/সরকারি চাকরি হতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ যে প্রতিষ্ঠান হতে অবসর উত্তর পেনশন গ্রহণ করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান হতেই বার্ষিক উৎসব ও নববর্ষ ভাতা গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান হতে উৎসব ও নববর্ষ ভাতা প্রদানের সুযোগ নেই; যদি না অবসর গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হতে এ মর্মে প্রত্যয়ন প্রদান করে যে, তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে উৎসব ও নববর্ষ ভাতা গ্রহণ করেন না। সেক্ষেত্রে পূর্বের প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত বার্ষিক উৎসব ও নববর্ষ ভাতার সমপরিমাণ অর্থ ভাতা হিসেবে প্রাপ্য হবেন। এই নির্দেশনা মোতাবেক কোনভাবেই তিনি এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ গ্রহণ করতে পারেন না।

সে সময় এ ব্যাপারে ইউজিসির অর্থ পরিচালক মো. শাহ আলম বলেছিলেন, চুক্তিভিক্তিক নিয়োগে কোনভাবেই উৎসব ভাতা পাবেন না। এটা যদি করা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা বেআইনী এবং বড় ধরণের অর্থিক অনিয়ম বলে গণ্য হবে।


সর্বশেষ সংবাদ