ভূতের ছবিতে রূপান্তরিত হল সাত কলেজ

সাত কলেজ
সাত কলেজ  © টিডিসি ফটো

ভূতের ছবি দেখে এমন কেউ নেই যে ভয়ে আঁতকে ওঠেনি। অনেকেই তো ভয় পেয়ে হার্ট ফেল করেছেন আবার এসব ছবি দেখে অনেকেই মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম আন্ট্রুম হরর মুভিটি। কারণ এ ছবিটি যারা দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। 

এই মুভিটি একটি অল্প বয়সী ছেলে ও মেয়েকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যারা তাদের মৃত পোষা প্রাণীর প্রাণ বাঁচাতে বনে যায়। তারা এন্ট্রাম নামক একটি জায়গা খুঁজে পায় এবং ওই ছেলেমেয়ে গুলো নরকের গর্ত খুঁড়তে শুরু করে। এমন আরও ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর ঘটনা ছিল আন্ট্রুম হরর মুভিটিতে। এই ছবিটি এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল তৎকালীন সময়ে ৬০ জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। 

এটা ছিল একটা ভূতের ছবির কাহিনী। সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার বার হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কারণে ভূতের ছবি দেখার মতই অনুভূতি হচ্ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় জানিয়ে ছিলো ‘একজন শিক্ষার্থী ১ম বর্ষ-৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ ক্রেডিট মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবে।’ গত ১৯ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। 

অথচ ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষেই ২০ ক্রেডিটের উপর পরীক্ষা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট অধিভুক্ত সাত কলেজে স্নাতক ১ম বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ ক্রেডিটের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার নির্দেশনা স্থগিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন: যেভাবে প্রকাশ্যে এলো প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত তানভীরের ফল

এতে বলা হয়েছে , ১৭-১৮, ১৮-১৯ এবং ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা পাস বিষয় শুধুমাত্র পরের ব্যাচের সাথে এবং "এফ" গ্রেড প্রাপ্ত বিষয় পরবর্তী ২ ব্যাচের সাথে মানোন্নয়ন দিতে পারবে।

স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ১৭-১৮ সেশনের অনেক শিক্ষার্থীরা ২০ ক্রেডিটের নিয়ম মেনে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ করে টাকাও জমা দিয়েছে। অথচ তাদের বিষয়ে নতুন নোটিশে কোন নির্দেশনা নেই।

যারা স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ করে টাকাও জমা দিয়েছিলেন তাদের টাকা পেমেন্ট আর দেখাচ্ছে না। আর যারা আজ টাকা জমা দিতে গিয়েছিল তাদেরকে ফর্ম পূরণের টাকা জমা দিতে দেয়নি কলেজ।  প্রতি মুহুর্তেই এমন নতুন নতুন সিদ্ধান্তে ভূতের ছবি দেখার মত হঠাৎ করেই আঁতকে উঠছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ভূতের ছবি গুলো দেখতে বসলেই পূর্বেই অনুমিত ভয়ঙ্কর চিত্রকল্প থাকবে। তেমনি হঠাৎ হঠাৎ সাত কলেজের নিয়মনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন দেখে ভূতের ছবি দেখার মত অনুভূতি হচ্ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হুটহাট সিদ্ধান্ত গুলো শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের স্বপ্ন মাটি করে দিচ্ছে। 

ঢাকা কলেজের তানভীর তৌকির বলেন, ২০১৭ ব্যাচের ছাত্রদের ২বছর পার হয়ে গেছে। নোটিশ অনুযায়ী ২ বছরে ফেইল করা সাবজেক্ট মান উন্নয়ন না হলে ড্রপ আউট বলে বিবেচিত হবে । অথচ আমরা ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েও শেষ করে ফেললাম গতকাল। নোটিশ অনুযায়ী তো আমরা তৃতীয় বর্ষেই ড্রপ আউট!। 

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান রিমন বলেন, গত ৪ বছরে নিয়মের গিনিপিগ হয়ে আছি আমরা প্রতি বছর কোন না কোন নতুন নিয়ম দেখেছি কখনোও সিলেবাস ছাড়া পরীক্ষা, তো কখন বাংলা ইংরেজি খেল আবার এটাও শিখেছি ৪ ঘণ্টার পরীক্ষা ২ ঘণ্টায় দিলে করোনা হয় না। এতো নিয়ম মনে হয় যার যা ইচ্ছে তাই নিয়ম দেখা বা শোনার কেউ নেই, আমরা যেন সতীনের বাচ্চা। সর্বশেষ গত ১৯ তারিখ থেকে আজ ৩ তারিখ ৩-৪ বার ইম্প্রুভমেন্টের নিয়ম পরিবর্তন হলো যার কোনটার সাথে কোনটার মিল নেই অতীতের সাথেও নেই। কিন্তু কাল শেষ দিন ফর্ম ফিল আপের। কে বা কারা নেন এই সিদ্ধান্ত। যে নিয়মটা অতীতের সাথে মিল নেই ৪ বছর শেষ করে এসে শুনি প্রথম বর্ষে ফেইল থাকলে গ্যাপ না দিয়ে টানা দুই বছরে শেষ করতে হবে তবে তাই যদি হত সে আমি শেষ বছর এসে জেনে কি করব আমার তো প্রথম বর্ষ ফেইল তাইলে কি আমার অর্নাস লাইফ বাদ?

বাঙলা কলেজের মাসুদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কখনো কথা দিয়ে রাখতে পারতেন না। সকালে এক ঘোষণা দিলেও রাতেই তা পরিবর্তন হয়ে যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সাত কলেজের ভার সইতে না পেরে কখন যে কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা নিজেরাই ভালো করে জানেন না।

তিনি আরও বলেন, মূলত সাত কলেজের জন্য কোন নীতিমালা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। কিন্তু এসব অদ্ভুত সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। আমি নিজেও ফরম পূরণ করেছি। অথচ কলেজ কৃর্তৃপক্ষ টাকা জমা নিচ্ছেন না। যারা টাকা জমা দিয়েছিল তাদের টাকা আর পেমেন্টে দেখাচ্ছে না।