খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বন্ধ ক্যাম্পাসে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ, নষ্ট করে ফেলছে গাছপালা

খুবি ক্যাম্পাসে গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ নষ্ট করে ফেলছে গাছপালা
খুবি ক্যাম্পাসে গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ নষ্ট করে ফেলছে গাছপালা  © টিডিসি ফটো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এখন গরু ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাস দীর্ঘ বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে পরিচর্যার অভাবে ঘাসের আকার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী ও স্থানীয়দের এসব গবাদিপশু সৌন্দর্যবর্ধক গাছপালা নষ্ট করার পাশাপাশি খেয়ে ফেলছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লানের অংশ হিসাবে ২০১৮ সালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী থেকে কটাকা স্মৃতিসৌধ, ৩নং এ্যাকাডেমিক বিল্ডিং থেকে লাইব্রেরী ও কটকা থেকে ১নং এ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে বিভিন্ন রকমের সৌন্দর্য বোধক প্রায় শতাধিক বৃক্ষ রোপন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন রোটার্যাক্ট ক্লাব অফ খুলনা ইউনিভার্সিটি কটকা থেকে এক নাম্বার একাডেমিক বিল্ডিং ২০টি গাছ, আর কটকা থেকে লাইব্রেরি পাশ দিয়ে ৩৫টা গাছ রোপন করেছিলো। এর মধ্যে নষ্ট হয়েছে ১০-১৫টা। গরু, ছাগল উপড়ে ফেলেছে আর খেয়ে ফেলেছে।

অন্যদিকে বাঁধণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট লাইব্রেরির থেকে ৩ নাম্বার এ্যাকাডেমিক বিল্ডিং পর্যন্ত কাঠগোলাপ, রংগন, বেলি গাছ রোপন করেছিলো। কিন্তু বেষ্টনীসহ সব নষ্ট করে ফেলছে এসব গবাদি পশুরা। কিন্তু বেষ্টনীসহ সব নষ্ট করে ফেলছে এসব গবাদি পশুরা। সংগঠনের সদস্যরা এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সকল শিক্ষার্থীরা চাই ক্যাম্পাসকে আরও সবুজ করে তুলতে। আমাদের পক্ষে তো এগুলো প্রতিদিন খেয়াল রাখা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যারা আছেন তারা খেয়াল রাখলে এমনটা হয়তো হতো না।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে অনেক রকম বৃক্ষ রোপন করেছেন। এদের মধ্যে এমনই একজন শিক্ষার্থী ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের অর্নিবান দাস বেশ কিছু বৃক্ষ রোপন করেছিলো। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে তিন হাজার টাকার গাছপালা রোপন করেছিলাম কিন্তু আর মাত্র তিনটা গাছ বেঁচে আছে। আর সবগুলো গরু ছাগল খেয়ে ফেলছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সকাল থেকেই এসব গবাদিপশু বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোড সংলগ্ন খাজা গেট অন্যান্য জায়গা থেকে প্রবেশ করে সরাসরি মাঠে চলে যায়। সেখান থেকে ঘাসলতা পাতা খেয়ে ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেই গাছপালা খেয়ে ফেলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন সিকিউরিটি গার্ড জানান, স্থানীয়দের চাইতে শিক্ষক, কর্মকতা ও কর্মচারীদের গবাদিপশুর সংখ্যা বেশি। যার ফলে তারা প্রশাসনের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই মাঠে এসব গবাদিপশু ছেড়ে দেন। এরপরও যদি গবাদি পশু আটকালে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন আবার ও সময় মত মাঠে ছেড়ে দেন। তারা আরও দাবি করেন, তারা হয়তো ভেবে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ডিসিপ্লিনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় গাছের অযত্ন এবং গাছ ধ্বংসের ছবি চোখে পড়ে। এতগুলো গার্ড কর্মরত থাকা সত্বেও বারবার গবাদিপশু এসব গাছ খেয়ে ফেলে, ভেঙে ফেলে। কিন্তু সে সব তদারকির কোনো নামগন্ধও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আর ভারসাম্য রক্ষায় এই সকল গাছ বারবার রোপণ করা হলেও এমন অবহেলা আমাদেরকে ব্যথিত করে। অচিরেই এসবের তদারকি প্রয়োজন।

মাঠে গরু-ছাগল প্রবেশে কোন ধরনের অনুমতি আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষিত এরিয়া। গবেষণার জন্য ক্যাম্পাসের সব জায়গা মোটামুটি ব্যবহার করা হয়। গবাদিপশু এসব এলাকায় ঢুকে নষ্ট করে দেয় এজন্য ক্যাম্পাসে গরু ছাগল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।

তিনি আরও বলেন, যদি কোন গরু ছাগল ঢুকে পড়ে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে খড়ে দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। কেউ যদি ধরে নিয়ে যায় তাহলে সেও নিদিষ্ট কিছু টাকা পাবে। একই সাথে গবাদিপশুর মালিকের ও জরিমানা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারীদের গরু ছাগল হওয়ায় পার পেয়ে যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ক্যাম্পাসে গবাদিপশু ঢুকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী ও স্থানীয়দের কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

নিরাপত্তা শাখার তত্ত্বাবধায়ক মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, আজকে থেকেই আমরা গরু ছাগল ধরে নিয়ে আসবো। এছাড়াও এদিকে নজর রাখা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ