ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে

  © ফাইল ফটো

সাধারণত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনেই স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ হওয়া কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার। তাই এসব স্বপ্নচারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য সরকারী বা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের ভর্তির মাধ্যেমে শিক্ষা জীবনের একটি ধাপ হতে অন্যধাপে অতিক্রম করতে হয়।

এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শেষে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয় শিক্ষার্থীদেরকে। কারণ এসময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহন করতে ভর্তি যুদ্ধে। প্রতিবছর দেশের প্রত্যেকটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনের বিপরীতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সকরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে ভর্তির জন্য প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আলাদা কিছু নিয়মের সমন্বয়ে। এখানে দেশীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশী শিক্ষার্থীরাও ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ফরেন স্টুডেন্ট সেল।

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীন ৩৩টি বিভাগে মোট ২২৭৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এখনই।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সক্রান্ত আজকের আয়োজনে থাকছে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর নির্ধারণ ও বন্টনসহ অন্যান্য বিষয়াবলী। এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রতিবেদক এ আর রাশেদ।

ভর্তি পরীক্ষার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:

এবছর ভর্তি পরীক্ষায় যে সকল পরিবর্তন আনা হতে পারে:

আসন সংখ্যা বৃদ্ধি: গত বছর শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক ইবিতে পাঁচ বছর মেয়াদী অর্গানোগ্রাম পাশ হয়েছে। এতে বিভিন্ন অনুষদের অধীনে ২৮টি নতুন বিভাগ খোলার কথা রয়েছে। তবে এবছর কোন বিভাগ খোলা হবে কি না এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ জানান, ‘আমাদের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী নতুন বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবছর নতুন কোন বিভাগ খোলার অনুমোদন দিলে সেক্ষেত্রে আমরা বিভাগ চালু করতে পারবো।’

এছাড়া গতবছর অক্টবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি অনুষদ ভেঙ্গে মোট ৮টি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মানবিক, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন ও শরীয়াহ অনুষদভূক্ত ‘বি’ ইউনিটে মোট ১৩টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় তেমন কোন পরিবর্তন না হলেও বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং জীব বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত বিভাগগুলোতে কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষার নম্বর নির্ধারণ: ভর্তি পরীক্ষার মান হবে মোট ১২০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষার মান হবে ৮০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের সাথে পরীক্ষার্থীর এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় জিপিএ (সর্বোচ্চ ৫+৫=১০ নম্বর) কে ৪ দিয়ে গুন করে প্রাপ্ত নম্বর সর্বাধিক (২০+২০=৪০) নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে এবং ওএমআর পদ্ধতিতে উত্তর মূল্যায়ন করা হবে। ভূল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা যাবে। একজন পরীক্ষার্থী ৮০ নম্বরের মধ্যে ৩২ পেলে কৃতকার্য বলে বিবেচিত হবে।

ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার নম্বর বণ্টন: এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা মোট ৪টি ইউনিটে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেব অনুযায়ী ‘এ’ ইউনিটের অধীনে ধর্মতত্ব অনুষদের ৩টি বিভাগ, ‘বি’ ইউনিটের অধীনে কলা ও সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি এবং আইন ও শরীয়াহ অনুষদের ৩টি বিভাগসহ মোট ১৩টি বিভাগ। ‘সি’ ইউনিটের অধীনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৬টি বিভাগ এবং ‘ডি’ ইউনিটে অধীনে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং জীব বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ১১টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

‘এ’ ইউনিট: ধর্মতত্ত্ব অনুষদ ভূক্ত ৩টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় আরবীতে ১০, আল কুরআনে ১৫, আল হাদীসে ১৫, দাওয়ায় ১০, ইসলামী শিক্ষায় ৫, আল-ফিক্হে ৫, ইসলামের ইতিহাসে ৫, বাংলায় ৫, ইংরেজিতে ৫ এবং সাধারন জ্ঞানে ৫ নম্বর থাকবে।

‘বি’ ইউনিট: কলা ও সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি বিভাগে ভর্তির জন্য বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩০, এবং সাধারণ জ্ঞানে ২০ নম্বর থাকবে। এর মধ্যে বাংলা বিভাগে ভর্তির জন্য বাংলা বিষয়ে নূন্যতম ১৮ নম্বর পেতে হবে। ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজি বিষয়ে নূন্যতম ১৮ নম্বর পেতে হবে এবং মাধ্যমিক/ সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে নূন্যতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। আরবী বিভাগে ভর্তির জন্য এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান উভয় ক্ষেত্রে আরবী ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজি বিষয়ে নূন্যতম ১৩ নম্বর পেতে হবে।

অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজিতে ৩০, সাধারন জ্ঞানে ৩০ এবং বাংলায় ২০ নম্বর থাকবে। এর মধ্যে অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজিতে নূন্যতম ১২ নম্বর পেতে হবে। সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজিতে নূন্যতম ১৫ নম্বর পেতে হবে।

এছাড়া আইন ও শরীয়াহ অনুষদের ৩টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এবং সাধারন জ্ঞান ২০ নম্বর থাকবে। আইন ও ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির জন্য ইংরেজিতে নূন্যতম ১৫ নম্বর পেতে হবে। আল ফিক্হ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির জন্য অবশ্যই আরবী ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।

‘সি’ ইউনিট: ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভূক্ত ৬ টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ৪০ বাধ্যতামূলক সকল শাখার জন্য। বাণিজ্য শাখা থেকে আগতদের জন্য ব্যবসায় শিক্ষায় ২০ এবং হিসাব বিজ্ঞানে ২০ নম্বর থাকবে। অন্যান্য শাখা থেকে আগতদের জন্য সাধারণ গণিতে ২০ এবং সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তায় ২০ নম্বর থাকবে। কৃতকার্য হওয়ার জন্য প্রত্যেক শাখার জন্য ইংরেজি বিষয়ে নূন্যতম ১৬ নম্বর পেতে হবে।

‘ডি’ ইউনিট: বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং জীব বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ৫টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় রসায়নে ৩০, জীব বিজ্ঞান/গনিতে ৩০, পদার্থ বিজ্ঞানে ১০ এবং ইংরেজিতে ১০ নম্বর থাকবে। ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে ভর্তির জন্য এইচএসসি পর্যায়ে গনিতে জিপিএ-৩.৫ থাকতে হবে এবং রয়াসনে নূন্যতম ১২ নম্বর পেতে হবে।

ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পর্যায়ে অবশ্যই জীব বিজ্ঞান পঠিত বিষয় হিসেবে থাকতে হবে। এমসিকিউ এর জীব বিজ্ঞানে নূন্যতম ১০ পেতে হবে। ফার্মেসি বিভাগে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় রসায়ন, জীব ও গণিতে জিপিএ-৩.৫ থাকতে হবে এবং এমসিকিউ এর রয়াসন, জীব বিজ্ঞান/গণিতের প্রতিটিতে নূন্যতম ১২ নম্বর পেতে হবে।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ৪০ এবং গণিতে ৪০ নম্বর থাকবে এবং কৃতকার্য হওয়ার জন্য প্রত্যেক বিষয়ে নূন্যতম ১৪ নম্বর পেতে হবে।

বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কৃতকার্য হওয়ার জন্য প্রত্যেক বিষয়ে নূন্যতম ১৪ নম্বর পেতে হবে এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় রসায়ন, জীব বিজ্ঞান ও গণিতে জিপিএ-৩.৫ থাকতে হবে। এছাড়া বাকি ২টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় গনিতে ৬০ এবং ইংরেজিতে ২০ নম্বর থাকবে। কৃতকার্য হওয়ার জন্য গনিত বিষয়ে নূন্যতম ২৪ নম্বর এবং ইংরেজিতে ৫ নম্বর পেতে হবে।

এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি:

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভর্তি পরীক্ষার সময় এক ঘন্টা। লিখিত পরীক্ষায় নূন্যতম ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ নম্বর পেয়ে পাশ করতে হবে। প্রতিটি ভূল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা হবে। ভর্তি পরীক্ষা শেষের কমপক্ষে তিন দিনের মধ্যে সকল ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার স্থান, আসন বিন্যাস ও ভর্তি সক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (www.iu.ac.bd) অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিটের অফিস থেকে জানা যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ