ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগ নেতা আটক
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৯ PM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৯ PM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সহসভাপতিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। আটক ওই নেতার নাম মামুনুর রশিদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের তৃতীয় তলায় ৩১৫ নম্বর কক্ষ থেকে মামুনুরকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
জানা যায়, আজ থেকে ২০১৯-১৯ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের লিখিত পরীক্ষা চলছিল। মামুনুর পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং প্রশাসনের লোকজন মামুনুরকে গাড়িতে করে বের দেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। কীভাবে একজন নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা পরীক্ষা দিতে আসার সাহস করেস, তা জানতে চান শিক্ষার্থীরা৷ পরে সেখানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সচিবালয়ে যাব: জবি শিক্ষক সমিতি
হট্টগোলের এক পর্যায়ে শিক্ষকরা বিষয়টির তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত করার আশ্বাস দিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবীর, তানভীর মন্ডল, গোলাম রাব্বানী এবং অন্যান্য সদস্যরা প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভাগীয় শিক্ষকদের সহযোগিতায় মামুনুরকে ইবি থানায় সোপর্দ করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’; ‘দোসরদের ঠিকানা, ইবিতে হবে না’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’; ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘ছাত্রলীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’; ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’; ‘দিয়েছি ত রক্ত, আরো দেব রক্ত’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এই মামুনুর রশিদ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারও আগে শিক্ষার্থীদের মারধরও করেছে সে। আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একজনকে মোল্লা বলে কটাক্ষ এবং অন্যান্যের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আজকেও সে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছে।’
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সচিবালয়ে যাব: জবি শিক্ষক সমিতি
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘একজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা যে এখন পর্যন্তও ফেসবুকে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে পোস্ট করে যাচ্ছে। এ রকম একজন সন্ত্রাসীকে বিভাগের শিক্ষকরা কীভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে, তা আমরা জানতে চাই। কয়েক দিন পরপরই একেকজন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কীভাবে পরীক্ষা দিতে আসার সাহস পায়, কাদের ব্যাকাপে এই পরিকল্পনা করে তা আমরা জানতে চাই। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, ছাত্রলীগের দোসরদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না৷’
সহকারী প্রক্টর ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে বিভিন্ন সময় যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তার অংশ হিসেবে আজকের ঘটনাটা আমাকে শঙ্কিত করেছে। এই ছেলের নামে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। সে একে ত নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য, তার ওপর আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিল। আজকে সে পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে। আমি শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাদের সহায়তায় আমরা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছি। এই ছেলেকে আমরা থানা হেফাজতে দিয়ে গেলাম এবং পরবর্তীতে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ইবির ৯ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা
ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি পদে আছে মামুনুর। একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনে আছে সে। আজকে সে পরীক্ষা দিতে এলে যেন মব সৃষ্টি না হয়, এ জন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হামলার ঘটনায় আহত আরমান মীর বাদী হয়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় গত ৩০ অক্টোবর একটি মামলা করেন। সেই মামলার ১৮ নং আসামি হিসেবে ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।