কৃষ্ণচূড়ার আভায় রঙিন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

আব্দুল আহাদ ঈশান
আব্দুল আহাদ ঈশান  © টিডিসি ফটো

তপ্ত রোদ্দুর আর উষ্ণ বাতাসে যখন চারিদিকে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে, তখন গ্রীষ্মের আরেক রূপে রঙিন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেই রূপে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে সিঁদুর লাল কৃষ্ণচূড়ার সাজে সেজেছে বিশ্বকবির নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা। আর কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই হয়তো কবি তার কবিতায় লিখেছেন "ডাক দিয়ে যায় পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ায়।"

এই তপ্ত গ্রীষ্মে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশান্তি জাগিয়ে দিতে বিশাল ফুলের তোড়ার রূপে নিজেকে সাজিয়ে আহবান জানিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। গাছের ডালে ডালে চোখ ধাঁধানো রঙের ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। ফুলের প্রাচুর্যে লাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসের আকাশ-বাতাস। সবুজের মাঝের এই রঙিন আভায় দূর থেকে মনে হয় যেনো আগুন জ্বলছে। এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস। যার চিত্রপটে শিক্ষার্থীরা আঁকছে হরেক রকমের স্বপ্ন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকলেও রবি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয় নি কৃষ্ণচূড়ার এই নৈসর্গিক ও বিমোহিত সৌন্দর্য থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-২ এর প্রবেশপথেই নিজের সৌন্দর্যের জানান দিয়ে যাচ্ছে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। পাশাপাশি অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১ এর শ্রেণীকক্ষ ঘেঁষেই রয়েছে আরেকটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সময় কাটে বিসিক বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে সড়ক জুড়ে দাঁড়িয়ে নিজের সৌন্দর্য বিলাচ্ছে আরেকটি কৃষ্ণচূড়া। ছোট এই ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য যেনো নতুন প্রাণের সঞ্চার করছে।

শুধু শিক্ষার্থী নয়, পাশ দিয়ে যাওয়া যেকোনো পথচারীরই হৃদয় কাড়ে নয়ন জুড়ানো এই কৃষ্ণচূড়া। আর মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে যেনো বলে উঠে ‘বাহ! কী মায়াবী জাল বিস্তার করেছে আকাশের পানে।’ 

হালকা বাতাসে যখন কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো দোল খায়, তখন হৃদয়ও দোলা দিয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া পাপড়িতে সবুজ ঘাসের ওপর সৃষ্ট রক্তলাল পুষ্পশয্যায় চোখ জুড়িয়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে মনে পড়ে যায় কবি গুরুর লেখা ‘গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে / তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী।’ আর বৃষ্টির দিনে তো কোন কথা ই নেই। বৃষ্টিমাখা ফুলগুলোতে উঠে আসা সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে জাগিয়ে তোলে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা।

কৃষ্ণচূড়ার এই রক্তিম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মু. আবু কাওছার বলেন, গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর রুক্ষতাকে ছাপিয়ে ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল পসরার অপরূপ দৃশ্য চোখে ও মনে ধরা দিচ্ছে শিল্পের এক রঙিন প্রচ্ছদ। বারবারই আকর্ষণ করছে কৃষ্ণচূড়ার এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। যেনো প্রতিনিয়ত মনে সঞ্চার করছে নতুন প্রাণ। ক্যম্পাসে পড়াশোনার ব্যস্ততায় শত ক্লান্তিতেও কৃষ্ণচূড়ার রঙিন সৌন্দর্যে মুহুর্তেই মন ভাল হয়ে যায়।

পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়েই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের তাপদাহের মধ্যেও আনন্দ দেয় চোখ ধাঁধানো এসব লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া। সৌন্দর্য ছড়িয়ে আগলে রাখে ক্যাম্পাসকে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত। অনেকে এর ফলকে গুলমোহর নামেও ডাকেন। এ গাছ মধ্যম থেকে লম্বা গড়নের মাথা ছড়ানো হয়ে থাকে। ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। কমলা অথবা লাল রঙের আকর্ষণীয় ফুলের ডালের আগাছা গুচ্ছবদ্ধ।

কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মরিসাসে, পরে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বিস্তার ঘটে। আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে এখন দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার।