যবিপ্রবিতে আইপিই বিভাগের প্রজেক্ট এক্সিবিশন
- যবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৪০ PM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৪০ PM
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগে প্রজেক্ট এক্সিবিশন সম্পন্ন হয়েছে। এতে অটোমেটিক ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশন ফর প্লান্ট, সলিড ফার্টিলাইজার স্প্রেডার মেশিন, এটমোসফেরিক ১.০, পোর্টেবল ইলেকট্রিক ওয়াটার বোতল এবং মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের মত প্রজেক্ট প্রদর্শনী করা হয়েছে। যবিপ্রবির আইপিই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা কোর্সের অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আইপিই বিভাগের সকল শিক্ষক প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।
সলিড ফার্টিলাইজার স্প্রেডার মেশিন তৈরিকারী গ্রুপের সদস্যরা বলেন, বীজ এবং কঠিন সার ছিটানো যন্ত্রটি সাধারণত কৃষকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যার কথা চিন্তা করে তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত কৃষকেরা চাষাবাদের সময় হাত দিয়ে ক্ষতিকর সার এবং অন্যান্য কঠিন পদার্থ গুলো ছিটিয়ে থাকেন সেগুলো তাদের স্বাস্থ্যর জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের যন্ত্রটি সেই ঝুঁকি নিরসন করতে সাহায্য করবে। এতে করে কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং অল্প সময়ে জমিতে বেশি সার ছিটানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর তৈরি করা গ্রুপের দলনেতা সাঈদ আনোয়ার বলেন, এটি এমন একটি মেশিন, যেটা ব্যবহার করে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রাথমিক ও মধ্যম সমস্যা সম্বলিত রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে। মেশিনটিতে মিক্সিং, প্রেসিং এবং কন্ট্রোল ইউনিট নামে তিনটি ইউনিট রয়েছে। মিক্সিং ইউনিটে শুষ্ক অক্সিজেনের সাথে জলীয়বাষ্প সম্বলিত বায়ু মেশানো হয়, যেটা সরাসরি আরডুনো নিয়ন্ত্রিত ও ডিসপ্লে থেকে সরাসরি দেখা যাবে। যন্ত্রটিতে থাকা মোটর সরাসরি এম্বুব্যাগকে পুশ করবে এবং নির্দিষ্ট আয়তনের ও প্রেশারের বায়ু মাক্সের মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করবে। এটি সাধারণত ম্যানুয়ালি ব্যাগ প্রেসিং, এ্যাজমা, এনেস্থিসিয়া, সিআরপি রোগীদের জন্য প্রযোজ্য। বর্তমানে বাজারে থাকা ভেন্টিলেটর থেকে এটির সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলও বাজারে থাকা ভেন্টিলেটর মূল্য যেখানে ১-১০ লাখ সেখানে এটির বাজার মূল্য মাত্র আট হাজার টাকা এবং এটি দ্রুত উৎপাদনযোগ্য।
এটমসফেয়ারিক ১.০ গ্রুপের সদস্যরা বলেন, 'বর্তমানে মাত্রারিক্ত বায়ু দূষণকে মাথায় রেখে আমরা এই প্রোডাক্টটি বানিয়েছি। আমরা যে বাতাস প্রতিনিয়ত ফুসফুস এ গ্রহণ করছি তাতে এমন অনেক ক্ষুদ্র ধূলিকণাও থাকে যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এসব ক্ষুদ্র ধুলিকণাই বেশি ক্ষতিকর, কারণ এরা ফুসফুস এ জমে থাকে। যেহেতু এসব খালি চোখে দেখা যায় না, তাই আমরা বুঝতেই পারি না আমরা নিজেদের কত বড় ক্ষতি করছি। এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমাদের এমন একটি যন্ত্র বানানোর চিন্তা মাথায় আসে যা এই না দেখা ধূলিকণাকে শনাক্ত করে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
আমরা যখন এমন কোনও প্রোডাক্ট আগে থেকেই আছে কিনা খোজা শুরু করি তখন দেখি বাজারে থাকা প্রোডাক্টগুলো একসাথে অনেক ফিচার দেয়। এজন্য তারা বেশি সেন্সর ব্যবহার করতে যেয়ে প্রোডাক্ট এর দাম এবং আকার দুটোই বাড়িয়ে ফেলেছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেগুলোর পোরট্যাবিলিটি ও ভালো না। তাই আমরা কম খরচে এবং পোরট্যাবল একটি এয়ার কোয়ালিটি মাপার ডিভাইস বানানোর কাজে লেগে পড়ি যা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকবে।
আমরা ডাস্ট পারটিকেল ডিটেক্ট করার জন্য GP2Y1010AU0F সেন্সরটি ব্যবহার করি। এটি ০.৮ মাইক্রোমিটার আকারের কণাও ডিটেক্ট করতে পারে। মানে এটি আমদের চুলের থেকেও ৬ গুণ চিকণ কোনও কণা শনাক্ত করতে পারে। এটি এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি ধোয়ার মধ্যে থাকা কণাও শনাক্ত করতে পারে। এই সেন্সরটি আমরা সংযুক্ত করি Arduino Nano মাইক্রোকন্ট্রোলার এর সাথে। এর সাথে আমরা একটি রিচার্জেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি যুক্ত করি। চার্জ করার জন্য একটি মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ও সংযুক্ত করা হয়। এরপর আমরা এই সেটআপটি একটি কেসিং এ স্থাপন করি। কেসিংটি আমরা নিজেরাই ডিজাইন করে থ্রিডি প্রিন্ট করে বানিয়ে নেই। সাথে একটি বিপার ও সংযুক্ত করে দেই যা শব্দ করে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে কখন ধুলো বেড়ে গেছে। এর পরে আমরা মাইক্রোকন্ট্র্রেলার এ প্রোগ্রাম করে একটি ভ্যালু ০.২গ্রাম/ঘনমিটার সেট করে দেই যার উপরে ধুলোর রিডিং পেলেই যন্ত্রটি আপনাকে শব্দ করে জানিয়ে দেবে। মজার ব্যাপার হলও যেহেতু এটি ধোয়াও ডিটেক্ট করতে পারে তাই এটি আপনার বাড়িতে ফায়ার ডিটেক্টর হিসেবেও কাজ করবে। এটি বানাতে খরচ হয় মাত্র ১৫০০ টাকা যা বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে আরও কমানো সম্ভব।
পোর্টেবল ইলেকট্রিক ওয়াটার বোতল তৈরিকারী গ্রুপের সদস্যরা বলেন, এটি একটি স্মার্ট গেজেট। যা দেখতে নরমাল ওয়াটার বোতলের মতো হলেও এর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ কিছু ফিচার। যেখানে নরমাল পানি রেখে একটি সুইচ ব্যবহারের মাধ্যমে ঐ পানিকে ঠাণ্ডা বা গরম করা যায় এবং বোতলের পানির তাপমাত্রা কত আছে তা ডিসপ্লের মাধ্যমে উপরে দেখা যায়। ডিসপ্লেটি সম্পূর্ণ টাচ স্ক্রিন। এই প্রোডাক্টটি তৈরি করতে আমরা ব্যবহার করেছি একটি সাধারণ ওয়াটার বোতল, হিট মডিউম, এলুমিনিয়াম হিট সিংক, কুলিং ফ্যান, এবং সম্পূর্ণ সিস্টেমটাকে পাওয়ার অন/অফ করার জন্য ব্যবহার করেছি রিচার্জেবল লিথিয়াম ব্যাটারি। আমাদের এই প্রোডাক্টের অন্যতম একটি সুবিধা হল এটি পোর্টেবল হওয়ার কারণে যে কোন স্থানে নেওয়া সম্ভব এবং ব্যবহারকারী তার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পানি পান করতে পারবেন।