সাত কলেজে ভর্তি শিক্ষার্থী যাচাইয়ে ভোগান্তিতে শিক্ষকরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ২৫ অক্টোবর। তবে, প্রতিবারের মত ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের কোনো তালিকা এবার কলেজগুলোতে পাঠায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মনোনীত শিক্ষার্থীদের ছবি ও কাগজপত্র যাচাই করে ভতি করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের। এমন পরিস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের ভোগান্তি বেড়েছে। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের তথ্য অনলাইনে যাচাইয়ে সুযোগ দেয়া হলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সে ওয়েবসাইটটি সচল হয়নি। এতে শিক্ষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি বেড়েছে।

যদিও অনলাইন ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভোগান্তি কমাতেই তালিকা কলেজগুলোতে পাঠানো হয়নি। কমিটির দাবি, তালিকা পাঠানো হলে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে বা কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির পর তার তথ্য অনলাইনে এন্ট্রির পর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। আর শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের ওয়েবসাইটটি খুব শিগগিরই সচল হবে বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। 

জানা গেছে, গত সোমবার থেকে সরকারি সাত কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলেজে সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। এর আগে অনলাইনে ভর্তি ও অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে কলেজগুলোতে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ উপস্থিত শিক্ষার্থীর সাথে প্রবেশপত্রের ও টাকা জমার রসিদের ছবি ও তথ্য যাচাই করবে। প্রয়োজনে অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://academic.college.eis.du.ac.bd) যাচাই করে নিতে পারবে।

পরবর্তীতে সব মূল কাগজপত্র যাচাইয়ের পর টাকা জমার রসিদের শিক্ষার্থীর কপিতে কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে কপিটি শিক্ষার্থীকে ফেরৎ দেবে। টাকা জমা রসিদের কলেজের কপি কলেজ কর্তৃপক্ষ অনলাইনে তথ্য প্রবেশের জন্য সংরক্ষণ করবে। সশরীরে শিক্ষার্থী কলেজে হাজির হলে ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কোন মনোনীত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রয়োজন নেই। সব শিক্ষার্থীর টাকা জমার রসিদের তথ্য অনলাইনে তুলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার নিজ নিজ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করবে।

আরও পড়ুন: সাত কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শেষ ২৫ অক্টোবর

ঢাকা কলেজসহ ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজে শিক্ষকরা বলছেন, অনলাইনে প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ফি নেয়া হয়েছে। পরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাইগ্রেশনে শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কারা কারা মনোনীত হয়েছেন সেসব শিক্ষার্থীর একটি তালিকা প্রতিবছর দেয়া হয়। তবে, এবার কোনো দেয়া হলো না তা বুঝলাম না। এদিকে শিক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, টাকা জমা দেয়ার রিসিট, ছবি ইত্যাদি যাচাই করে ভর্তি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝতে পারবো কেউ নীলক্ষেত থেকে রশিদ তৈরি করে নিয়ে এসেছে কিনা?

শিক্ষকরা আরও বলছেন, তারা ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটও কাজ করছে না। ফলে আমরা শিক্ষকরা ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছি। মনোনীত শিক্ষার্থীদের একটি খসড়া তালিকা ভর্তি কমিটি চাইলেই কলেজগুলোকে দিতে পারতো। এতে শিক্ষকদের এতো ভোগান্তি হতো না। খসড়া তালিকায় শিক্ষার্থীর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আমরা ভর্তি নিতে পাড়তাম। 

অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভর্তির আগে মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিকার কোনো প্রয়োজন নেই। মনোনীত সব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না। মনোনীত শিক্ষার্থীরা যখন কলেজগুলোতে যাবে তার কাছে এমন কিছু তথ্য আছে যা দিয়ে তাদের যাচাই করা যাবে। ভর্তি হলেই শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি করতে হবে। মনোনীত সব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না। যারা যারা ভর্তি হবে তাদের তথ্য কলেজের পক্ষ থেকে এন্ট্রি করা হলে আমরা বুঝতে পারবো ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। 

ওয়েবসাইট অচল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে কিছু কাজ চলছে। আর কলেজগুলোর কাছে আমার ওয়েবসাইটের জন্য ওনাদের ইউজার চেয়েছিলাম। ইউজারকে নিশ্চিত হতে এনআইডি চাওয়া হয়েছিলো। সেগুলো সময়মতো আমরা পাইনি। মঙ্গলবার হয়তো এনআইডিগুলো এসেছে। আমার বুধবার রাতে আশা করি ওয়েবসাইটটি সচল করতে পারবো। তাহলে শিক্ষকরা মনোনীত শিক্ষার্থীদের সহজে যাচাই করতে পারবে। 

তিনি আরও জানান, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য যখন কলেজ এন্ট্রি করবে তখন আমরা ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো। আগের বছরগুলোতে আগে তালিকা করায় কে ভর্তি হয়েছে কে ভর্তি হয়নি সেটা বুঝতে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিলো। আগে তালিকা দেয়াতে অনেক সময় দেখা গেছে, কলেজগুলো বলছে ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, কিন্তু দেখা গেছে সে অন্য কলেজের ছাত্র। শিক্ষকরা যখন এন্ট্রি দেবেন তখন আমাদের সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের তথ্য দেখতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে যাবেন। অ্যাডমিট কার্ড ও তার মূল সনদ দেখে শিক্ষার্থীদের যাচাই করে ভর্তি করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য কলেজগুলো পক্ষ থেকে এন্ট্রি করা হলে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ