আবেদ আলীকে নিয়ে যা জানালেন পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম

ইকরাম আহমেদ ও সৈয়দ আবেদ আলী
ইকরাম আহমেদ ও সৈয়দ আবেদ আলী  © ফাইল ছবি

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ছেলেসহ গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। গণমাধ্যমে একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসছে তার নামে। তবে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে ‘কোন চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক ছিলেন তিনি’?

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগদান করে মীর আবেদ আলী। চাকরিতে যোগদানের পর ওই বছরই বিয়ে করেন তিনি। নিজের নামও পরিবর্তন করেন তিনি। নামের শুরুতে মীর পরিবর্তন করে সৈয়দ যোগ করেন। শুধু তাই নয়; পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পিএসসিতে যোগদানের পর নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

পিএসসিতে কোন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী সেই তথ্য পিএসসি’র কোনো কর্মকর্তাই নিশ্চিত করতে পারেননি। পিএসসি বলছে, পরিবহন পুলের ড্রাইভার ছিলেন আবেদ আলী। ২০১৪ সালে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও চাকরি হারান ২০১৫ সালে। 

২০১৪ সালে পিএসসি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় অনেকেরই ধারণা তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদের ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকরাম আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর আমি পিএসসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছিলাম। আমি যতদিন ছিলাম ততদিন সে (আবেদন আলী) আমার ড্রাইভার ছিলেন না। আমার জানা মতে সে কোনো চেয়ারম্যানেরই ড্রাইভার ছিলেন না।

আবেদ আলীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পিএসসি’র সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আবেদ আলীকে আমি চিনি না। তবে আমার সময় কোনো অনিয়ম হয়নি। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আমার সময় কোনো প্রশ্নফাঁস হয়নি। 

কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসেছে লাখো তরুণের আস্থার প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠা করেছেন কোচিং সেন্টারও। 

এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গিয়ে নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। গড়েছেন বাড়ি-গাড়ি। এই অসাধু ব্যক্তিদের ধরতে নানা ভাবে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে পিএসসি। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, পিএসসি’র বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষকসহ নানা মাধ্যমে এমসিকিউ পরীক্ষার সাজেশনমূলক প্রশ্ন সংগ্রহ করেন। সেই প্রশ্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পড়ান। প্রশ্ন থেকে পরীক্ষায় কমন আসলে সাধারণ প্রার্থীরা মনে করেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আদতে তা নয়; যা সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা বুঝতে পারেন না।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পিএসসিতে চাকরি করেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা উপার্জনের জন্য নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পিএসসিতে কর্মরত যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেন কিংবা কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া কিংবা কোচিং প্রতিষ্ঠান খুলে তা পরিচালনার সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ