হিজাব-বোরকা নিয়ে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এল আইইউবিএটি

বোরখা পরিহিত শিক্ষার্থী ও আইইউবিএটির লোগো
বোরখা পরিহিত শিক্ষার্থী ও আইইউবিএটির লোগো  © টিডিসি ফটো

নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় অনুমোদিত পোশক হিজাব-বোরকা নিয়ে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। একইসঙ্গে সরস্বতী পূজায় একদিন এবং দুর্গাপূজায় কমপক্ষে তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

এরআগে ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় পোশাকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তবে এরপর থেকে দীর্ঘদিন এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুটা সহনশীল অবস্থানে ছিলো।

আরও পড়ুন : আন্দোলনের মুখে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিল আইইউবিএটি প্রশাসন

জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর ধর্মীয় অনুমোদিত পোশক পরিধানে বাধা না দেয়া, শিক্ষকদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, পূজার ছুটি দেয়াসহ মোট ২৭ দফা দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ওই ২৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরদিন গত সোমবার দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। 

শিক্ষার্থীদের সুপারিশগুলো ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মসজিদ সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে। প্রযোজনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গার্ড নিয়োগ করতে হবে এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিকাদের যেকোনো প্রেজেন্টেশন, ভাইভা, পরীক্ষা, ক্লাস ইত্যাদির ক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত পোশাক পরিধানে কোনো রকম বাধা প্রদান করা যাবে না। পুরুষ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের টাই এবং টাক ইন ব্যাপারে স্বাধীনতা দিতে হবে।

সরস্বতী পূজায় একদিন এবং দুর্গাপূজায় কমপক্ষে তিন দিন বন্ধ দিতে হবে। এছাড়া, সরকারি ছুটতে কোনো মেকআপ ক্লাস নেওয়া যাবে না। শুক্রবারে কোনো অনলাইন বা অফলাইন ক্লাস নেওয়া যাবে না। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে সহনশীল আচরণ করতে হবে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে যে কোনো দুর্ব্যবহার কারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ড্রেস কোড প্রয়োগ করা যাবে না।

আরও পড়ুন : ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলনে আইইউবিএটির শিক্ষার্থীরা

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্ধারিত ক্লাস সংখ্যা সীমিত করতে হবে এবং পর্যান্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে। এছাড়া, অনলাইনে মেকআপ ক্লাস নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সহনশীল আচরণ করতে হবে। পর্যান্ত ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করতে হবে এবং ল্যাব ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে। ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিসের জন্য নির্ধারিত ক্লাস সময়ের বাইরে ও ল্যাব উন্মুক্ত রাখতে হবে। সার্টিফিকেটে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং আইইউবিএটির আইইবি ও কেআইবি মেম্বারশিপের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। 

শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্তৃপক্ষ এবং স্টাফদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে এবং মতের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রমাণ সাপেক্ষে দুর্ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যান্টিনে খাবারের গুণগত মান উন্নত করতে হবে এবং আলোচনার ভিত্তিতে খাবারের মূল্য কমিয়ে শিক্ষার্থীদের। সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে হবে।

খেলার মাঠের গুণগত মানোন্নয়নে এবং পর্যাপ্ত অর্থায়নে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। ইনডোর ক্রীড়া ব্যতীত অন্য একোনো কার্যক্রম খেলার মাঠে সম্পন্ন করা যাবে না। রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রযোজনীয় জরিমানা প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থার মান উন্নত করতে হবে। অ্যাটেনডেন্সের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহনশীল হতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আসন সংখ্যা নিশ্চিত করতে হবে এবং কোর্স তাফারিং সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। নির্ধারিত কোর্সের বাইরে অতিরিক্ত কোর্স চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। লাইব্রেরিতে কোর্স সংক্রান্ত শিট নিয়ে প্রবেশে বাধা প্রদান করা যাবে না। চলমান দাবির পক্ষে এবং আন্দোলনে যুক্ত থাকা যেকোনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতাক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোনো হয়রানিমূলক কোনো প্রকার বা শান্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। 

রেজিস্ট্রার এবং প্রোক্টরের পদত্যাগ। মিড ও ফাইনালের সিলেবাস আলাদা করতে হবে। জরিমানা বাতিল করে রেজিস্ট্রেশন ও রিটেক ফি ৫০ শতাংশ করতে হবে। ক্রেডিট ট্রান্সফার দেশ ও দেশের বাইরে ঝামেলা মুক্ত করতে হবে। পূর্বের এবং বর্তমান এর গ্রেডিং সিস্টেমের পার্থক্য নির্মূল করতে হবে। নোটিশ ইমেইল এ দিতে হবে। গার্ডিয়ানের প্রতি সহনশীল হতে হবে এবং রেজাল্ট নিয়ে ভাদের হ্যাসেল করা যাবে না।
ক্যাম্পাসে কমপ্লেইন বক্স যুক্ত করতে হবে এবং প্রতিদিনের আপডেট দিতে হবে। ওয়াইফাই সমস্যা সমাধান করতে হবে। কনসালটেন্সি রুমে স্টুডেন্টদের পড়ার সুযোগ দিতে হবে। 

উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ