বিএসপিইউএ’র সংবাদ সম্মেলন

১৫ শতাংশ ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ ৯ দাবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএসপিইউএ’র সংবাদ সম্মেলন
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএসপিইউএ’র সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের অবসান, ১৫ শতাংশ ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহার করে এ অর্থ ছাত্র-কল্যাণ, স্কলারশিপ ও গবেষণায় বরাদ্দসহ সহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকস (বিএসপিইউএ)। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এতে বিএসপিইউএ সভাপতি ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। 

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ উচ্চশিক্ষায় আজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৪ সালের কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং এবং টাইম্স হাইয়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী শিক্ষার গুণগত মান ও গবেষণায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। গ্র্যাজুয়েটরা বর্তমানে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। 

এ সময় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে- যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বৈষম্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরেন। 

১. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ বা অনুদান না পাওয়ায় কেবল মাত্র শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির উপর নির্ভর করে চলতে হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয় বাদ দিলে যে অর্থ থাকে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জমা করা হয়। অথচ জমাকৃত এই ফান্ড থেকে সরকার ১৫ শতাংশ ট্যাক্স কেটে নেয়। উপরন্তু তড়িঘড়ি করে ট্যাক্স ক্যালকুলেশনে ইউনিভার্সিটির ইন্টারব্যাংক ট্রানজেকশনকে আয় হিসেবে বিবেচনা করেছে- যা গোঁজামিল ছাড়া কিছুই নয়। 

অতীতে ২০১০ ও ২০১৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আরোপের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন সেটির বিরুদ্ধে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ দাবীতে ছাত্রসমাজ সোচ্চার হয়েছিল। তাই ২০১৫ সালে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে সরকার বাধ্য হয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে বিগত সরকার অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ১৫ শতাংশ করারোপ করে- যা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বস্তুতপক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কোনো প্রকার ভ্যাট -ট্যাক্স আরোপ করা তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংসহ আন্তর্জাতিকভাবে নানাবিধ স্বীকৃতি অর্জন করতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়র উপর করারোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই এবং তা আত্মঘাতীও বটে। তাই তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করে তা গবেষণা, স্কলারশিপ এবং ছাত্র-কল্যাণে বরাদ্দের নির্দেশনা প্রদানের দাবী জানান। 

২. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন (ইউজিসি) ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীকালে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১০ এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার  সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিধিবদ্ধ হয়। বর্তমানে ইউজিসিতে একজন চেয়ারম্যান এবং পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্যের মাঝে মাত্র একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ছয় খণ্ডকালীন সদস্যের মাঝে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সদস্য নেয়া হয়নি। ইউজিসির  বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি। এত্থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিগুণেরও বেশী। 

তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ইউজিসি’র পুনর্গঠন দরকার। অনতিবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুপাতিকহারে পুর্নকালীন এবং খণ্ডকালীন সদস্য নিয়োগ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এক্ট্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তাই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন, বাংলাদেশ এক্ট্রেডিটেশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি তাদের।

৩. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মঞ্জুরী বিতরণের জন্য স্থাপিত ট্রেডিশনাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন (ইউজিসি), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে মোটেও উপযুক্ত নয়। যাকে বলা যায় ‘ফ্লড বাই ডিজাইন’। ইউজিসি অনুদান দেয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, অথচ শাসন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত পত্রসমূহে যেমন শক্ত ভাষা ব্যবহার করে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রসমূহে তেমন করে না– যা সুস্পষ্ট বৈষম্য। ইউজিসিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এমন বৈষম্য দূর হবার আশা করা যায় না। 

অন্যদিকে ইউজিসি যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অনুদান দেয় না, তাই  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ‘মঞ্জুরি কমিশন’ নামের কোন যৌক্তিকতা নেই। ইউজিসির বর্তমান কাঠামো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রমের সাথে সম্পূরক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য একটি স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি বলে মত বিএসপিইউএ’র।  

৪. বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত বা পাকিস্তানেও নেই। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করছে। এটি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিক্ষার্থীরা যেন একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। 

শিক্ষাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখলে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খল ও সমন্বিতভাবে তাদের শিক্ষা জীবন পরিচালনা করতে পারবে, যা তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বা স্টুডেন্ট কেবিনেট থাকতে পারে- যা কেবল তাদের লেখাপড়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করবে, কিন্তু রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিতা করবে না। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুরবৃত্তিক ছাত্র-রাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার দাবী জানান শিক্ষকরা।

৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা চাকুরির বাজারে অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতা এবং যোগ্যতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে নেই। কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানগত পরিচয়ের কারণে তারা দীর্ঘদিন থেকে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চাকুরির বিজ্ঞপ্তিতে নিদিষ্ট কিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে কেবল তাদের কাছ থেকেই আবেদন আহ্বান করে- যা অন্যায় ও বেআইনি। অনেক চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের সিভি/রেজুমে গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তাদেরকে ইন্টারভিউতে ডাকে না। 

শিক্ষকরা মনে করেন, কোন প্রকার স্বজন-প্রীতি, ঘুষ বা প্রতিষ্ঠানগত পরিচয়ে নয়, সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার। অন্যদিকে সরকারি চাকুরিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটরা যাতে কোনো বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্যে বিসিএস পরীক্ষাসহ সকল নিয়োগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরী বলে আমরা মনে করি। আমরা চাকুরির বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধের দাবী জানান তারা। 

৬. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ভূমিকা প্রসংশার দাবি রাখে। একসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক না থাকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকেই প্রসাশনিক সর্বোচ্চ পদ যেমন, ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার ইত্যাদিতে দায়িত্ব পালন করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সিনিয়র শিক্ষক তথা প্রফেসর থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক সর্বোচ্চ পদসমূহের নিয়োগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির নীতি নির্ধারণ এবং কার্যক্রমে অনেক গতি আসবে। এতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান তারা।

৭. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর কোনো কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেত না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এ বৈষম্যের প্রতিবাদে তখনো সংবাদ সম্মেলন করেছিল। পরবর্তীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটরা বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেলেও অদ্যাবধি তারা পিএইচডি প্রোগ্রামে সরাসরি ভর্তির অনুমতি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা যেতে যেতে পারে। 

যোগ্যতা ও দক্ষতার কোনরূপ যাচাই-বাছাই না করে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানগত পরিচয়ের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আজো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি প্রোগ্রামে সরাসরি ভর্তি হচ্ছে এবং অনেকেই ঐ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকতায় নিয়োজিত রয়েছে। আমরা চাই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। তাই উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের সাথে চলমান বৈষম্য দূর করার দাবী জানান শিক্ষকরা। 

৮. বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিএইচডি প্রোগ্রাম অফার করতে পারে না। বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ অবকাঠামোগত ও গুণগত মানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে নেই। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি প্রোগ্রাম অফার করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কাল-ক্ষেপণ করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বৈ কিছু নয়। আমরা মনে করি, সুনির্দিষ্ট ও মানসম্মত নীতিমালার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি প্রোগ্রাম অফার করার সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। 

তারা বিশ্বাস করেন, পিএইচডি প্রোগ্রাম অফার করলে গবেষণায় এবং মানসম্পন্ন প্রকাশনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সর্বোপরি গবেষণায় অগ্রগতি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের বর্তমান র্যাঙ্কিং উন্নত করতে অবদান রাখবে। উল্লেখ্য যে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার প্রয়োজনীয় নীতিমালা ইতোমধ্যে বিএসপিইউএ শিক্ষা মন্ত্রানালয়ে জমা দিয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার দাবি জানান তারা। 

৯. বর্তমানে বাংলাদেশে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত সার্ভিস রুলস নেই। মানসম্মত সার্ভিস রুলস না থাকার কারণে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং পেশাগত চাকুরীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। একটি মানসম্মত সার্ভিস রুলস চালু থাকলে শিক্ষকদের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়। এটি শিক্ষকদের অধিকার সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

মানসম্মত সার্ভিস রুলসের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রাপ্য সুবিধা যেমন- মানসম্মত বেতন স্কেল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি, গ্রুপ ইন্সুরেন্স, চাকরির নিরাপত্তা এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত সার্ভিস রুলস চালু করার দাবী জানান তারা। 

আরো পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে আজ

বিএসপিইউএ সভাপতি অধ্যাপক সোবহানী সংক্ষেপে উচ্চশিক্ষায় গুণগত মানোন্নয়নে বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যদূরীকরণে তাদের দাবি পেশ জানান-

১. অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহার করে উক্ত অর্থ ছাত্র-কল্যাণ, স্কলারশিপ ও গবেষণায় বরাদ্দের নির্দেশনা দেয়া হোক।

২. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বাংলাদেশ এক্ট্রেডিটেশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হোক।

৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হোক।

৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা হোক। 

৫. চাকুরির ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা হোক।

৬. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়া হোক। 

৭. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী গ্রাজুয়েটদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পিএইচডি’তে ভর্তির সুযোগ দেয়া হোক।

৮. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হোক এবং

৯. প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত সার্ভিস রুলস চালু করা হোক। 

তিনি বলেন, বিএসপিইউএ আশা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউজিসি, এপিইউবি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ (বিওটি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সকল কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে উত্থাপিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে- যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষার জন্য অতীব জরুরী। বক্তব্যের শুরুতেই বিএসপিইউএ সভাপতি অধ্যাপক সোবহানী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং যারা এখনো আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। 

তারা ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিএসপিইউএ অভিনন্দন জানান। বিএসপিইউএ নবনিযুক্ত শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকেও অভিনন্দন জানায়। বিএসপিইউএ আশা করে, বাংলাদেশে শিক্ষা-ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, দেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা হবে এবং গণতন্ত্রের ভীত রচনা হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বিএসপিইউএ সভাপতি সবাইকে পেশাদারীত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু খুলে দেয়া হয়েছে, তাই তিনি সকল শিক্ষার্থীকে ক্লাসে যোগদানের আহবান জানান।   

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, বিএসপিইউএ সাধারণ সম্পাদক ড. নাহিন মামুন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল্লাহ আল-মামুন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএসপিইউএ ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. আখতার হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন) অধ্যাপক ড. মামুন হাবীব, অর্থ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জুলফিকুর হাসান, মিডিয়া এন্ড পিআর সম্পাদক রিয়াজ হাফিজ, ইসি সদস্য অধ্যাপক ড. নেহরীন মাজেদ প্রমুখ।  


সর্বশেষ সংবাদ