ঢাকার বিভিন্ন সড়ক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দখলে, চলছে বিক্ষোভ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০১:২৮ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৫০ PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে এবার মাঠে নেমেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন সড়ক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে রেখেছে। এতে অচল হয়ে পড়েছে সড়কে যানচলাচল।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১০ টা থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, সিটি ইউনিভার্সিটি এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। দুপুরে সাভারের বিরুলিয়ায় ৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান করে এ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
এছাড়াও সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে কুড়িল বিশ্বরোড অবরোধ করেছেন নর্থ সাউথ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন ব্র্যাক ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) শিক্ষার্থীরা। সকালে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন।
জানা গেছে, রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হন। তাদেরও দাবি সম্বলিত ব্যানার বহন করতে দেখা গেছে।
বনানী কাকলি মোড়ে অবরোধ করেছে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও মিরপুর ১০ অবরোধ করেছে বিইউবিটি শিক্ষার্থীরা।
ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ULAB) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মূল গেটের সামনে গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করেছে।
প্রিমেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স বনানি-কাকলী সিগনাল অবরোধ করেছে। নতুন বাজার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দখলে। আফতাব নগরে রাস্তায় নেমেছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এয়ারপোর্ট রোডে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়াও বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে উচ্চমাধ্যমিকের ৪ কলেজের শিক্ষার্থীরা সাইন্সল্যাবে অবস্থান নিয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, আব্দুর রউফ কলেজ ,সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ। এসময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তায় নেমে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে গতকাল সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’ স্লোগান দেন। তাদের এমন স্লোগান ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। বেশ কয়েকজনকে অস্ত্র হাতেও দেখা যায়। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আহত হন কয়েকশ শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতরদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের হটাতে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত পৌনে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ছাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাতেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার অভিযোগ ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন।