পাবলিক-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি: তফাৎটা নামে নয়, মানে
বাংলাদেশের সৃষ্টি থেকে অগ্রগতিতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অসামান্য অবদান রেখেছে বরাবরই। তবে কে ভালো করছে, পাবলিক নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে প্রায়শই এ ধরনের বিষয় উত্থাপিত হতে দেখা যায়। যদিও শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এককভাবে ভালো খারাপের মানদণ্ড নির্ণয়ের কোন সুযোগ নেই।
তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আলাদা গুরুত্ব বহনের পাশাপাশি শিক্ষা গবেষণায় ভূমিকাও ব্যতিক্রম। কোনটি পাবলিক এবং কোনটি প্রাইভেট সেটির চেয়ে গুণগত মান নিশ্চিতের বিষয়টি একটি প্রতিষ্ঠানকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।
আরও পড়ুন: বিজয় একাত্তরের চেয়ে ছোট কুয়েত মৈত্রী হলের বিদ্যুৎ বিল তিন গুণ বেশি
স্বাধীনতার পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমানে বুয়েট) অবদান এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত। নব্বইয়ের দশকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাটি ব্যতিক্রম ছিল। এই ধারায় ক্রমান্বয়ে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে।
‘‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১০০ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে ৫ থেকে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ভালো করছে। এরপর আরও ১০ থেকে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় মডারেটলি ভালো করছে। তবে এরপরের স্তরের প্রতিষ্ঠানসমূহ শুধু সার্টিফিকেট সর্বস্ব এবং বাকিরা খুবই নিম্ন মানের—ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪টি। তবে এতসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে নতুন করে ধারণা তৈরি হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা অধিকতর মান নিশ্চিতের মত বিষয়াবলিও আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট কিংবা প্রথম সারির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেকাংশে এগিয়ে রাখা হলেও অন্য সাধারণ কিংবা প্রান্তিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রথম সারিতে রাখতে চায় না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন অংশীজন। এ অবস্থার বিশেষ কিছু কারণও স্পষ্ট— এমনটাই মত তাদের।
আরও পড়ুন: অভিভাবক ছাড়াই চলছে ৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাবির টিএসসিতে আড্ডা
তাদের ভাষ্য, পাশ্চাত্যে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিংহভাগ শুরু থেকেই বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত; বাংলাদেশে যেটি নব্বেইয়ের দশকে চালু হয়। পরবর্তীতে এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে উল্লেখযোগ্য অবদানও রাখে। যেখানে সাম্প্রতিককালে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর্যাপ্ত আর্থিক সংকুলান এবং কাঠামোগত অব্যবস্থাপনার ফলে অনেক পিছিয়ে। বিশেষত সরকারের প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি যথাযথ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় বারবারই মানের বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে।
‘‘বিশ্বের সকল নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু বেসরকারি। আমরা বিশ্বের বাইরে নয়। আমাদের এখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র ৩০ বছর। কাজেই আমরা বিশ্বের ট্রেন্ডকে ধরার চেষ্টা করবো এটাই স্বাভাবিক—অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউআইইউ
আবার একইরকম নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠা লাভ করা প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত রাজধানী কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ের অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। এক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম, আইনের তোয়াক্কা না করা, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, মান হীনতার দরুন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা কিংবা সার্টিফিকেট বিক্রির মতো গুরুতর অভিযোগ অধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
দেশের উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়ার সঙ্গে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্বের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু বেসরকারি। আমরা বিশ্বের বাইরে নয়। আমাদের এখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র ৩০ বছর। কাজেই আমরা বিশ্বের ট্রেন্ডকে ধরার চেষ্টা করবো এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি খুব স্বল্প সময়ে দু’ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাকিদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়িয়ে যাবে। আরেকটি দিক হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিচালনার জন্য বরাদ্দ কিংবা মানসম্পন্ন ফ্যাকাল্টি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো করছে। তবে আক্ষেপের বিষয় হলো পাবলিক এবং প্রাইভেটের মধ্যে অর্থ সংক্রান্ত বড় একটা তফাত রয়েছে। ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো শিক্ষার্থী কম পাচ্ছে। আমি মনে করি— অচিরেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, প্রথমত সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তেমন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও মান নিশ্চিতের মাধ্যমে পরবর্তীতে ভালো করতে থাকে।
আরও পড়ুন: পড়াশোনার সঙ্গে চাকরিরও সুযোগ ইউআইইউতে
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১০০ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে প্রথম সারির প্রায় ৫ থেকে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ভালো করছে। এরপরে আরও ১০ থেকে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় মডারেটলি ভালো করছে। তবে এরপরের স্তরের প্রতিষ্ঠানসমূহ শুধু সার্টিফিকেট সর্বস্ব এবং বাকিরা খুবই নিম্ন মানের। সর্বসাকুল্যে এখানে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিতর্কের যে কারণ রয়েছে সেটি এক বাক্যে নির্ণয়ের সুযোগ নেই। বরং আমি বলবো এটি আমাদের জাতীয় কাঠামোর বৃহৎ ত্রুটির ফল। যদিও এখানে প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সূচকে নিচের দিকের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গুণগত মানের বড় তফাৎ রয়েছে। যারা এখন পর্যন্ত গবেষণার সংস্কৃতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
‘‘প্রাইভেটে সকল বিষয়ে পাঠদান করানো হয় না। সিএসই কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কিছু কোর্স পরিচালনায় প্রান্তিক কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো ভালো করছে। এটিকে কোনোভাবে শ্রেষ্ঠ বলা যাবে না। প্রথম দিকের কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাকিদের কোনো মানদণ্ড নেই।—ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
ড. মিজানুর রহমান আরও যোগ করেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায়ও প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে একদিকে যেমন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সংখ্যা বেশি আবার এখানে এমন কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা একইসাথে উচ্চবিত্ত এবং মেধাবী। কিন্তু তারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চায় না। বিপরীত চিত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দেখা যায়। এখানে ন্যাচারাল মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসলেও তাদের সবাই উচ্চবিত্ত নয়। বরং বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা দুর্বল।
তিনি মনে করেন, মূল বিষয় হলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণ, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, সেশনজটসহ যে-সকল বিতর্ক প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসে সেটি মেধাবীদের প্রতিভা বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
অপরদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোৎকৃষ্ট মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হলেও প্রথম থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে শেষে তারা ভালো করছে। একইরকম মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যেটি মূলত শিক্ষার মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিতে তাদের এগিয়ে দেয়৷
আবার প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভিন্নরকম কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেটি আসলে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার কোন সুযোগ থাকে না। ফলে একদিকে যেমন প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা বিরাজ করে অন্যদিকে একটা সাইকোলজিক্যাল গ্যাপ দেখা যায়। আমি মনে করি, সমস্যা সমাধানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের কাঠামো পরিবর্তন করলে ফল আসবে না; বরং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের মাধ্যমে কাঠামোগত আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরি।
‘‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরিপূরক হিসেবে কাজ করার জন্য। প্রতিযোগিতা করার জন্য নয়। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি, পক্ষান্তরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম ছিল। সেই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশগামী হওয়ার ফলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা— ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
মানদণ্ডের বিচারে পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তফাৎ কিংবা লক্ষ্য পূরণের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমত পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সবাই নিজেদের সেরা হিসেবে তুলে ধরতে চাওয়ার প্রবণতা একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। এখানে দোষের কিছু নেই। তবে বিশেষ করে বিজনেসের কিছু কোর্স পরিচালনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ভালো করছে। এতেও আমি বলব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বরাবরের মতই শ্রেষ্ঠ, যেটি তারাও স্বীকার করেন।
আবার প্রাইভেটে সকল বিষয়ে পাঠদান করানো হয় না। সিএসই কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কিছু কোর্স পরিচালনায় প্রান্তিক কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো ভালো করছে। এটিকে কোনোভাবে শ্রেষ্ঠ বলা যাবে না। প্রথম দিকের কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাকিদের কোনো মানদণ্ড নেই। আর লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারটি একটি আপেক্ষিক ধারণা। কাজেই সেটা কেউ পরিপূর্ণ অর্জন করতে পারে কিনা আমার জানা নেই।
সর্বোপরি আমি বলবো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ভালো বেতন দেয়া হয় এবং সেখানে এখনও রাজনীতির চর্চা নেই। ফলে শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের মন দিয়ে পড়ান। শিক্ষার্থীদেরও একটি মনস্তাত্ত্বিক তাড়না থাকে যে, যেহেতু বেশি বেতন দিতে হয় কাজেই তারা তাদের অধিকার পূর্ণাঙ্গ আদায় করে নিতে চায়।’ অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, শ্রেণীকক্ষ সংকট, আবাসন সংকট, সেশনজটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উঠে আসে। যেটি প্রকারান্তরে এ সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের গ্রামে যেতে হবে, এটা তাকে মানুষ থেকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করবে
পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মানদন্ডের তফাৎ এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শুরুর গল্প জানতে কথা হয় ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরিপূরক হিসেবে কাজ করার জন্য। প্রতিযোগিতা করার জন্য নয়। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি, পক্ষান্তরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম ছিল। সেই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশগামী হওয়ার ফলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছিল। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বহির্বিশ্বে না গিয়ে দেশে যোগ্য জনসম্পদ তৈরি, ফরেইন এক্সচেঞ্জ রোধকরন, সাংস্কৃতিক অভিঘাত রোধ করা, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ বৃহত্তর স্বার্থে দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা।
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আড্ডা
এই দীর্ঘ যাত্রায় বিভিন্ন সময় ঢেউ এসেছে। মৌলিক লক্ষ্য অটুট রেখে অনেক প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে পাঠদান করে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন জনের অপকর্মের সংবাদ উঠে আসতে দেখে দুঃখিত হই। যদিও আমি মনে করি ব্যতিক্রম কয়েকটি ঘটনা ব্যতীত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য মহৎ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাতালিকায় প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের না পেলেও মানসম্পন্ন কারিকুলামের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বাজার উপযোগী মানবসম্পদ তৈরির কাজটি সুনিপুণভাবে করে যায়। পাশাপাশি বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম অনেক বেশি আধুনিক। তবে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মতো প্রতিষ্ঠানকে আমি কুর্ণিশ করছি। সর্বোপরি দেশে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমত একাডেমিয়া এবং কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডকে একযোগে চলতে হবে।