স্ট্যামফোর্ডের দুই ছাত্রীর পর এবার জানা গেল জুনায়েদের মৃত্যুর খবর

নিহত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুনায়েদ এবং দুই ছাত্রী দোলা ও তার বোন মাইশা
নিহত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুনায়েদ এবং দুই ছাত্রী দোলা ও তার বোন মাইশা  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর পর এবার মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ হকের (২৩)। স্ট্যামফোর্ড থেকে পাশ করে তিনি বার কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

জুনায়েদের আগে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরিন কবির দোলা (৫৫ ব্যাচ) এবং তার বোন মাইশা কবির মাহির (৮০ ব্যাচ) মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। সবশেষ এই তিনজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্ট্যামফোর্ড প্রশাসন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহত জুনায়েদের বন্ধু সাদ বলেন, আগুন লেগেছে টের পাওয়ার পর আমরা তিন বন্ধু একসঙ্গে দৌড়ে বের হই। ধোঁয়া, হইচই, চিৎকার চারপাশে। একদল সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। একদল নিচে নামার চেষ্টা করছে। আমরা তিনজন ওপরের দিকে ছুটি। কিন্তু ওপরের ফ্লোরে পৌঁছে পেছনে ঘুরে দেখি ওরা নেই।

বেঁচে থাকাটা এখনো আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। ভবনের নিচে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনেরা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ‘ওপরে যাও, ওখানে রেসকিউ হচ্ছে।’ সঙ্গে থাকা দুই বন্ধু স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে বার কাউন্সিলের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জুনায়েদ হক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাজমুল আহসান মারা গেছেন। আমি একাই বেঁচে ফিরেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার আব্দুল মতিন এক শোকবার্তায় বলেন, গতকাল অগ্নিকাণ্ডে আমাদের তিনজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাদের জান্নাত নসিব করে।

আরও পড়ুন: বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ১৫ জনই শিক্ষক-শিক্ষার্থী

এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুর এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন ফোরাম ও ক্লাব এ বিষয়ে শোকবার্তা প্রকাশ করেন এবং নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় দগ্ধ চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই ‘এক্সটার্নাল বার্ন’ কম ছিল। এ অবস্থায় মৃতদের অধিকাংশই কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় নিহত হয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ