হো চি মিনের ঘটনায় ইউজিসিকে যে ব্যাখ্যা দিল নর্থ সাউথ

হো চি মিন ও নর্থ সাউথের লোগো
হো চি মিন ও নর্থ সাউথের লোগো  © ফাইল ছবি

গত বছরের শেষ দিকে ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে হো চি মিন ইসলামের যোগ দিতে না পারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ আলোচনা-সমালোচনার সম্মুখীন হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)। এ ঘটনায় শীর্ষস্থানীয় এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ব্যাখ্যা চায় খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি ইউজিসির দেয়া ওই চিঠির জবাবে ঘটনার ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউজিসির দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো চি মিন ইসলামকে “উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল–এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস” অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি কেন প্রদান করা হয়নি এবং এ ধরনের ঘটনা বা চর্চার পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।’

ওই চিঠির আলোকে গত ৩ ডিসেম্বর ইউজিসির কাছে ব্যাখ্যামূলক একটি চিঠি পাঠায় এনএসইউ রেজিস্ট্রার ড. আহমেদ তাজমীন। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) বাংলাদেশের সংবিধান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এবং এতদসংশ্লিষ্ট সকল বিধি-বিধান সযত্নে প্রতিপালন করে আসছে। এনএসইউর শিক্ষাকার্যক্রমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার, পরমতসহিষ্ণুতা, অন্তর্ভুক্তিতা, বৈষম্য নিরসন এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনসহ পিছিয়ে পড়া প্রান্তিকজনগোষ্ঠীর প্রতি সদাচরণের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে ৷

ইউজিসির জিজ্ঞাসাগুলোকে দুটি প্রশ্নে ভাগ করে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে এনএসইউ। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হো চি মিন ইসলামকে কেন ‘উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল-এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস' শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা হয় নি?— এমন প্রশ্নের জবাবে নর্থ সাউথের ব্যাখ্যা হলো, ‘এনএসইউর ক্যারিয়ার এন্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের (সিপিসি) সহযোগিতায় গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ২০২৩ হিরোস ফর অল এবং আই সোশ্যাল আয়োজিত উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভাল ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ারের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে নারীদের অনুপ্রাণিত করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।’

আরও বলা হয়েছে, ‘এনএসইউ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সিপিসি ছিল হোস্টের ভূমিকায় এবং পুরো আয়োজন সুচারুভাবে সম্পন্নের জন্য সিপিসি, হিরোস ফর অল এবং আই সোশ্যাল-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের কোন আলোচকদের সাথেই এনএসইউ সরাসরি কোনরূপ যোগাযোগ করেনি, বরং এই অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজক সংস্থাদ্বয়ের মাধ্যমেই হো চি মিন ইসলামসহ সকল আলোচকদের সাথে সকল যোগাযোগ সম্পাদিত হয়।’

‘২০ নভেম্বর ২০২৩ থেকে সামাজিক মাধ্যমে হো চিন মিন ইসলামের এনএসইউ ক্যাম্পাসে আগমন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকায় সিপিসি ও হিরোস ফর অল-এর মধ্যে বিশদ আলোচনার প্রেক্ষিতে ২৩ নভেম্বর ২০২৩ উক্ত অধিবেশনটি বাতিল করা হয়। ২৪ নভেম্বর ২০২৩ এনএসইউ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে উক্ত অধিবেশনটি বাতিল করা হয় মর্মে ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ২০২৩ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবরগুলো তথ্যনির্ভর ছিল না।’

আর এ ধরনের ঘটনা বা চর্চার পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?-এমন প্রশ্নের জবাবে এনএসইউর উত্তর হলো, এনএসইউর ২৪টি ক্লাবসংগঠনের ক্যাম্পাসভিত্তিক কার্যক্রমে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মজীবনের উপর আলোচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এনএসইউর লাইব্রেরীতে বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে এবং ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উক্ত কর্নার পরিদর্শন করেন।

এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, ফাল্গুনী উৎসব ও পহেলা বৈশাখ, সরস্বতী পূজা, পিঠামেলা, বিভিন্ন দেশীয় ব্যান্ডের কনসার্ট, বিদেশি জ্যাজ সংগীতের আসরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এনএসইউ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রসহ সংবিধানে বিধৃত মৌলমূল্যবোধের চর্চা সর্বদাই করে আসছে । বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতা বাড়াতে এনএসইউর এথিক্স অ্যান্ড ডাইভার্সিটি ক্লাব প্রতিবছর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও বৈচিত্র্যময় উৎসব পালন করে। ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্যরাও এই অনন্য উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর এনএসইউর নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রতিনিধি জয়া শিকদার অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আরো পড়ুন: লটারি ছাড়াও শিক্ষার্থী ভর্তি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেলে

এনএসইউ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাদ যাবে না কেউ প্রতিপাদ্যের একনিষ্ঠ সমর্থক। এনএসইউর এসডিজি বিষয়ক একটি গবেষণা গ্রন্থ ২৭ নভেম্বর ২০২৩ প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনএসইউর বিজনেস স্কুল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ইউনিসেফের সহযোগিতায় একটি জাতীয় নলেজ হাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

ইউজিসিকে পাঠানো চিঠিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে নর্থ সাউথ। এগুলো হলো:

  • এনএসইউর বিদ্যমান বৈষম্যহীন নীতি, পদ্ধতি এবং প্রোটোকলগুলির পর্যালোচনা শেষে উন্নতির সুযোগ রয়েছে এমন বিষয়গুলোর সমাধান জরুরি ভিত্তিতে করা হবে।
  • সহিংসতার হুমকির বিরুদ্ধে বিদ্যমান নীতিমালা সমূহের পর্যালোচনা শেষে তা কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হবে। এনএসইউর অভ্যন্তরে যে কোন পক্ষ থেকে সহিংসতার হুমকি প্রদান করা হলে বা অপরাধ সংগঠিত হলে শৃঙ্খলা বজায়ে দ্রুত ও যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ও আইনি-ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
  • বৈষম্য-বিরোধী এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পাঠদানের পাশাপাশি সকল শিক্ষক, প্রশাসক ও কর্মচারীদের এই বিষয়ে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে এবং আরও জোরদার করা হবে।
  • লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পৃক্ত করে এনএসইউ ধারাবাহিকভাবে যথোপযুক্ত অনুষ্ঠানসমূহের আয়োজন করবে।

এ বিষয়ে হো চি মিন ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এই দেশ সকলের। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা পরিচয় কিংবা বিশ্বাসের নয়। আমাদের মতো মানুষগুলোর অধিকার সংরক্ষিত করতে হবে। অন্যথায় সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে দেওয়া হোক।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাখ্যা নিয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, নর্থ সাউথ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা আপাতত সন্তোষজনক। তাদের ব্যাখ্যাকে ইউজিসি আমলে নিতে পারে বলেও জানিয়েছেন দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থার ওই কর্মকর্তা।


সর্বশেষ সংবাদ