একজন শিক্ষার্থী ও ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে স্কুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ০১:১০ PM , আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ০১:১০ PM
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর গ্রামে মাত্র একজন ছাত্র ও ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৯১ সালে গড়ে ওঠে বিদ্যালয়টি। ২০১০ সালে রেজিস্ট্রার ও ২০১৩ সালে সকল রেজিস্ট্রার স্কুলের সাথে সরকারিকরণ করা হয়৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে এ গ্রামটি শিশু সন্তান জন্ম নেওয়ার সংখ্যা একদমই কম হওয়ায় স্কুলটিতে রয়েছে শিক্ষার্থী সঙ্কট।
বর্তমানে পুরো স্কুলটিতে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে একজন মাত্র ছাত্র এবং ওই অধ্যায়নরত একমাত্র শিক্ষার্থীর নাম অর্পন সরকার। যাকে পড়ানোর জন্য রয়েছেন ৩ জন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে না হলেও বিনা পরিশ্রমে বেতন পাচ্ছেন তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী বলেন, “২৯টি পরিবার নিয়ে আমাদের ময়নাপুর গ্রাম। এই গ্রামে গত ৪ বছরে মাত্র পাঁচটি বাচ্চা জন্মেনি। এ কারণে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর এই দুরবস্থা।”
ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর ক্লাস্টারের পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মী সাদিয়া আক্তার শোভা বলেন, “ময়নাপুর গ্রামে ২৯টি পরিবার রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এ গ্রামে শিশু জন্মের হার খুবই কম। গত চার বছরে এ গ্রামে পাঁচটি শিশুর জন্ম হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৯ সালে ২টি, ২০২০ সালে ১টি, ২০২১ সালে ১টি ও ২০২২ সালে ১টি শিশুর জন্ম হয়। ফলে এ গ্রামে শিশু দেখা যায় না। গ্রামে জনবসতি কম ও প্রতি পরিবারে সন্তান থাকায় নতুন শিশু নেওয়ায় কম আগ্রহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি। ফলে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী কম।”
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিকদার আতিকুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থী সার্ভের পর গত মার্চ মাসে ময়নাপুর স্কুলটি বন্ধের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে লিখেছি। কিন্ত এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।”
খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুদ্দোহা বলেন, “ওই স্কুলটি বন্ধ করে সেখানকার শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার মণ্ডল জানান, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এ স্কুলে ১১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। তখন এ গ্রামে ৪১টি পরিবার ছিল। ২০১০ সালে রেজিস্ট্রার হওয়ার সময় শিক্ষার্থী ৬৫ তে নেমে আসে। তখন এ গ্রামে মাত্র ২৯টি পরিবার ছিল। বাকি ১২টি পরিবার ভারতে চলে যায়৷ ২০১৩ সালে সরকারিকরণের সময় এখানকার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০’র নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে শিশু না জন্মের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থী কমতে থাকে। বর্তমানে গ্রামের স্কুলে আসার মত ৬টি শিশু আছে। এদের মধ্যে ৫ জনের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই। এ কারণে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। ফলে পুরো স্কুলে ২য় শ্রেণিতে ওই একজন ছাত্রই রয়েছে।
এদিকে ডুমরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এ ২১৪ প্রতিষ্ঠানে ২২ হাজার ৬১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এরমধ্যে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এর নিচে।