একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম আর নেই
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৫ AM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ AM

দেশের টিস্যু কালচার ও বায়োটেকনোলজি গবেষণার পথিকৃৎ, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক অধ্যাপক ড. আহমদ শামসুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। এই মনীষীর জানাজা আজ বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
জীবনভর শিক্ষা, গবেষণা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত এই গুণীজন রেখে গেছেন দুই পুত্র, এক কন্যা, ১৪ জন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, ছাত্রছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ী। তাঁর বড় ছেলে অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, কন্যা ড. জেবা ইসলাম সিরাজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক এবং ছোট ছেলে খালিদ ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত আইটি বিশেষজ্ঞ।
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের জন্ম ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪১), রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (১৯৪৩), কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বোটানিতে অনার্স (১৯৪৫) ও এমএসসি (১৯৪৭) সম্পন্ন করেন। ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তিতে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইটোজেনেটিকসে পিএইচডি অর্জন করেন। সেই বছরই তাঁর ‘বীজবিহীন স্ট্রবেরি’ নিয়ে গবেষণার জন্য লাভ করেন কারি মেমোরিয়াল পুরস্কার।
চার দশকের বেশি সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তানের সিন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, তানজানিয়ার দার-এস-সালাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ-বিদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়িয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
দেশে বায়োটেকনোলজি গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন অধ্যাপক ইসলাম। তিনি সর্বপ্রথম দুটি বাণিজ্যিক পাটজাতের মধ্যে সফল সংকরায়ণ, পাটের টিস্যু কালচার ও মাইক্রোপ্রপাগেশন কৌশল উন্নয়ন করেন। সোমাক্লোনাল ভ্যারিয়েশন, মেরিস্টেম কালচার, ভাইরাসমুক্ত অর্কিড ও আলু উৎপাদনের গবেষণাও তার কৃতিত্ব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম 'প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার ও জেনেটিকস ল্যাবরেটরি' প্রতিষ্ঠা করেন। এসব গবেষণা দেশের কৃষি ও শিল্পবিষয়ক উন্নয়নে রেখেছে অসামান্য ভূমিকা।
গবেষণা ও শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট’স গোল্ড মেডেল ইন অ্যাগ্রিকালচার (১৯৮৪), একুশে পদক (শিক্ষা, ১৯৮৬), বিএএস গোল্ড মেডেল ইন বায়োলজি (১৯৮৭), বাংলাদেশ বোটানি অ্যাসোসিয়েশন স্বর্ণপদক (১৯৯৭) ও জিএনওবিবি’র আজীবন সম্মাননা (২০১৭)।
দেশে টিস্যু কালচার গবেষকদের সংগঠন ‘জিএনওবিবি’র প্রতিষ্ঠাতা মডারেটর ছিলেন অধ্যাপক ইসলাম। কোমলমতি শিশুদের মাঝে কুরআনের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে ১৯৮০ সালে গড়ে তোলেন ‘কুরআনিক স্কুল সোসাইটি’। লিখেছেন ‘স্মৃতির পটে জীবন ছবি’, ‘রাইমস অব দ্য হার্ট’, ‘বংশগতিবিদ্যার মূলকথা’, ‘জিন প্রকৌশল’সহ বহু প্রভাববিস্তারকারী গ্রন্থ ও পাঠ্যপুস্তক। সূত্র: ইউএনবি