মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে নানা প্রশ্নের উত্তর চেয়ে ড. ইউনূসকে ফাতিহার খোলা চিঠি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৯ AM , আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫১ AM

বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করাকে কি কখনোই ভারত-বিদ্বেষ বলা যায়? এমন পশ্ন রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি দিয়েছেন আলোচিত লেখক, পরিবেশবাদী সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী ফাতিহা আয়াত।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আছেন। সেখানে সাইডলাইনে আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আলোচনার টেবিলের বাইরে থাকা নানা বিষয় কি পাদপ্রদীপের আলোয় আসবে কি না, চিঠিতে তা-ও জানতে চেয়েছেন ফাতিয়া।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ফেসবুকে নিজের পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এই খোলা চিঠি পোস্ট করে এসব বিষয়ে জানতে চান।
পোস্টে ফাতিহা লেখেন, ‘প্রিয় মুহাম্মদ ইউনূস স্যার, আমার মতো নগণ্য মানুষের ক্ষুদ্র কয়েকটা প্রশ্ন আছে।’
ফাতিহা বলেন, ‘অসম জলবণ্টন ও নদী ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরিসীম অনিয়ম, অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা না করে ট্রানজিটের নামে অন্যায্য সুবিধা গ্রহণ, সীমান্তে বেসামরিক হত্যা, ইচ্ছাকৃত বাণিজ্য ঘাটতি, পণ্য পরিবহনে শুল্ক ও মাশুল নির্ধারণে বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ, অনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, একচেটিয়া বাজার দখল, পাহাড়ি অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ প্রদান, ধর্মীয় উগ্রবাদকে উসকে দেওয়া, সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর নামে প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে আসলে সার্বভৌমত্ত্বকে ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখা, পছন্দের রাজনৈতিক দলকে সরকার গঠনে বেআইনি সহায়তা প্রদান এবং অতঃপর সেই নতজানু সরকারকে দিয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোপন চুক্তি করিয়ে নেওয়া... বিগত ৫৩ বছরে আলোচনার টেবিলের বাইরে থাকা এই বিষয়গুলো কি এবার পাদপ্রদীপের আলোয় আসবে?’
ভারত-বিদ্বেষ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার কথা হলো, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করাকে কি কখনোই ভারত-বিদ্বেষ বলা যায়? সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতিটা ডাইমেনশনে চূড়ান্ত অসৌহার্দপূর্ণ আর চরম অশান্তিপূর্ণ পন্থায় আন্ডার টেনশনে থাকা বাংলাদেশ এই নিষ্ঠুর প্রতিবেশী থেকে নিজেকে ডিসইন্টিগ্রেটেড করার কথা ভাবলে সেটাকে কি ভারত বিদ্বেষ বলা যায়?’
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ কেন, তা নিয়ে ফাতিহা বলেন, ‘অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাকগ্রাউন্ডে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার বানিয়ে ভারতকে ভালোবাসাই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনা মনে করিয়ে আমদের বোঝানো হচ্ছে— নইলে আর মুক্তিযুদ্ধ হয়ে লাভ কি হলো! অথচ ভারত যে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থে, তা বুঝতে আইনস্টাইন হতে হয় না। দুই পাশে পারমাণবিক অস্ত্রসম্পন্ন দুটি পাকিস্তানকে রেখে ভারত ঘুমাত কী করে?’
তিনি বলেন, ‘তাই জীবনভর “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন” ভাবসম্প্রসারণ লিখতে লিখতে ক্লান্ত বাংলাদেশিদের এখন আর এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য “মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল” টাইপের একটা রিজনিং দাঁড় করানোর মতো কুমিরের কান্নার কি কোনো মানে হয়? আমরা কি ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’র নামে আসলে ‘ভারত প্রীতি’র কৌটায় সুগার কোটেড ললিপপ চুষছি?’
পোস্টের শেষে তিনি লেখেন, ‘আপনার স্নেহধন্য ফাতিহা আয়াত।’