৫৭ বছরে ম্যাট্রিক পাস
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২১, ০৯:৫৪ AM , আপডেট: ৩০ জুন ২০২১, ০৯:৫৪ AM
৫৭ বছর বয়সী ভারতের উড়িষ্যার বাসিন্দা স্বর্ণা লতা এই বছর বার্ষিক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করেছেন। এর আগে কয়েকবার ব্যর্থ হলেও হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করা এই নারী। আর এই বয়সে ম্যাট্রিক পাস করে আশেপাশের গ্রামের বহু মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
উড়িষ্যার ভদ্রাকের কান্তি গান গ্রামের বাসিন্দা স্বর্ণা লতা পাতি। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। ২৭ বছর বয়সে বিধবা হয়ে গেলে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার জীবন। স্বামী বেঁচে থাকতে ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন না পড়া এই নারীর ঘাড়ে এসে পড়ে ছোট দুই সন্তানকে বড় করে তোলার। দিনে কাজ আর রাতে পড়াশুনা করেছেন
কাজ খুঁজতে থাকেন স্বর্ণা লতা পাতি। কিন্তু লেখাপড়া না জানায় পাননি তা। গ্রামের স্কুলে তখন রান্নার কাজ নেন। একাজে প্রতিমাসে একশ’ রুপি পেতেন তিনি।
২০০৫ সালে গ্রামের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ পান স্বর্ণা লতা পাতি। কঠোর পরিশ্রম আর ত্যাগের কারণে জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার পুরস্কারও পান তিনি। দুই সন্তানকে স্নাতকোত্তর পাসও করান তিনি।
২০১৯ সালে উড়িষ্যা রাজ্য সরকার প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্রিক পাস নির্ধারণ করে দিলে বিপাকে পড়েন স্বর্ণা লতা পাতি। কাজটি টিকিয়ে রাখতে আর সব সুবিধা পেতে হলে তাকে ম্যাট্রিক পাস করতেই হবে।
সংগ্রামের প্রথম দিনগুলোতে প্রচুর লড়াই করেছেন স্বর্ণা লতা পাতি। সেখান থেকেই পেয়েছেন ইচ্ছাশক্তি আর সংকল্পের জোরের শিক্ষা। ফলে হতাশ না হয়ে দিনের বেলায় রান্না আর প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ চালিয়ে রাতের বেলায় পড়াশুনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অবশেষে মিলেছে কাঙ্ক্ষিত সফলতা
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যের একটি উন্মুক্ত স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন তিনি। পরের বছরের মার্চে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর সেপ্টেম্বরে আবারও পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেন তিনি। কিন্তু পাস করতে পারেননি।
পরে স্বর্ণা লতা পাতি বাগুরাই হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসেন কিন্তু ইংরেজিতে মাত্র চার মার্কের জন্য ফেইল করেন তিনি। ফলে এই বছর কেবল ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা দেন তিনি। মহামারির কারণে সরকার এই বছরের পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের পূর্বের রেকর্ড অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এবারে পাস করে গেছেন তিনি।