গুলি-পিটুনিতে হাসানের মস্তিষ্ক বেরিয়ে যায়, চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড পাঠাল সরকার

আন্দোলনে গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের মোটর মেকানিক মো. হাসান
আন্দোলনে গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের মোটর মেকানিক মো. হাসান  © সংগৃহীত

বৈষষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের মোটর মেকানিক মো. হাসান। গুলি-পিটুনিতে তার মস্তিষ্ক ছিটকে পড়েছিল রাস্তায়। জীবন বাঁচাতে হাসানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি খরচে থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশটির বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এর আগে তাকে নেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় রাত সাড়ে ৮টায়।

হাসানের চিকিৎসায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাবদ ৪৩ লাখ এবং হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ খরচ ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ খরচ আরও বাড়তে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার তার চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করবে। হাসানকে বিদায় জানানোর জন্য এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর, জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. মো. আব্দুল আহাদ ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রামগতি গ্রামের বাসিন্দা হাসান। ছোট বেলায় হারিয়েছেন বাবাকে। এরপর চাটখিল এতিমখানা মাদ্রাসা থেকে হাফেজি শেষ করে চট্টগ্রামে গাড়ির পার্টসের দোকানে কাজ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নগরীর টাইগার পাস এলাকায় ৪ আগস্ট মাথায় গুলি লাগে হাসানের। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রায় তিন মাস আগে তাকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানেও অগ্রগতি না হওয়ায় এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসানকে পাঠানো হলো থাইল্যান্ডে।

হাসানের বন্ধু মো. জাকির বলেন, ৪ আগস্ট সকাল ১০টায় হাসানসহ আমরা বন্ধুরা নিউমার্কেট থেকে আন্দোলন শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে টাইগার পাশ মোড়ে আসি। আমাদের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পড়ে যায়। আমরা পালিয়ে আসি। পেছনে থেকে ছাত্রলীগ আক্রমণ করে। আমার পাশে ছিল হাসান। আমার বাসা ছিল পাশেই। তাদের হামলার মুখে আমি ও হাসান দৌড় দেই। আমি কিছুটা এগিয়ে যাই। বাসায় ঢুকে দেখি হাসান সাথে নেই। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি হাসান মাটিতে পড়ে আছে। ওকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক দিয়ে পেটাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওরা চলে গেলে আমি কাছে গিয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখি। দেখি গুলি লেগে তার মাথার হাড় ভেঙ্গে গেছে। ব্রেনের কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে আছে। কতটা পশু হলে মানুষকে এভাবে মারা যায়। দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ৫ তারিখে তার অপারেশন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সিএমএইচে আনা হয়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হাসানের ছোটবোন সুবর্ণা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। হাসানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই। হাসান যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।


সর্বশেষ সংবাদ