শেষ জন্মদিনে অঝোরে কেঁদেছিলেন ম্যারাডোনা

দিয়েগো ম্যারাডোনা
দিয়েগো ম্যারাডোনা  © ইন্টারনেট

বুধবার সকাল দশটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছিলেন দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। শরীরটা ভাল লাগছিল না। আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ম্যারাডোনার অভিভাবকসম দু’জন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি। সঙ্গে সঙ্গে ম্যারাডোনার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করা শুরু করে দেন।

পারিবারিক ডাক্তার, আইনজীবী, তিন কন্যা, ডালমা, জিয়ানি, জানা, সবার সঙ্গে। আর্জেন্টিয়ায় দুপুরের মধ্যেই সারি সারি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে পড়ে ফুটবল ঈশ্বরের পাড়ায়। প্রায় আধ ডজন অ্যাম্বুল্যান্স। সবাই প্রবল চেষ্টা করছিলেন, কোনও ভাবে যদি ফিরিয়ে আনা যায় দিয়েগোকে। কোনওভাবে। কিন্তু হায়, যায়নি। ম্যারাডোনাকে আর ফেরানো যায়নি।

আর্জেন্টাইন সংবাদপত্র ‘ক্ল্যারিন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবনের শেষ দিকটায় বড় হতাশায় ভুগতেন ম্যারাডোনা। কিংবদন্তির মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ দিকে চলে গিয়েছিল যে, তাঁর মনোবিদ মিলে ঠিক করেছিলেন, ম্যারাডোনাকে কিউবা পাঠাতে। যে দেশ অসম্ভব ভালবাসতেন দিয়েগো। যে দেশে থাকতেন তাঁর বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রো। 

সংবাদ প্রতিদিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ম্যারাডোনা নাকি সাম্প্রতিকে এতটাই খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন যে, তাঁকে কিউবা পাঠানোর বন্দোবস্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিল। ফিদেল কাস্ত্রোর ছেলে টনিও খোলাখুলি আহবান করেছিলেন দিয়েগোকে। যাতে তিনি আসেন। শান্তিতে সুস্থ হতে পারেন। কিন্তু কিউবা যাওয়া আর হয়নি।

আর্জেন্টাইন মিডিয়ার খবর অনুযায়ী একটা বড় যন্ত্রণা হৃদয়ে নিয়ে প্রয়াত হলেন ম্যারাডোনা। নিজের ষাটতম জন্মদিনে দিয়েগো চেয়েছিলেন, তাঁর সমস্ত সন্তানরা একত্রিত হোক। নাতি-নাতনি সমেত। কিন্তু সেটা হয়নি। আসলে দিয়েগোর সন্তানরা তাঁর দায়িত্ব নিতেন উপর উপর। কিন্তু দায়িত্ববোধের গভীরে ঢুকতেন না। নইলে কেনই বা আর শেষ জন্মদিনে মারাদোনা ঝরঝর করে কেঁদে বলবেন, ‘আজ, আমি আমার পরিবারকে খুব মিস করছি। মা, তুমি নিশ্চয়ই উপর থেকে সব দেখছো। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে গর্বিত।’

জীবনের শেষ দিকে নিজের আইনজীবীর শ্যালকের সঙ্গে থাকতেন ম্যারাডোনা। তিনিই বলতে গেলে ছিলেন দিয়েগোর সহচর। ছিলেন তাঁর অতি বিশ্বাসী রাঁধুনি, মোনোয়া। যিনি ম্যারাডোনার কাছে মাতৃসম ছিলেন। দিয়েগো মাঝে মাঝেই সোচ্চারে বলতেন, ‘মোনোয়ার মতো মাংসের স্টু রাঁধতে কেউ পারে না।’ মোনোয়াও খেয়াল রাখতেন ফুটবলের খেয়ালি রাজপুত্রের। কোনওভাবে যাতে সুরা দিয়েগোর হাতে না পড়ে। রেফ্রিজারেটরে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ধরে ধরে সব রেখে দিতেন মোনায়া। চুইংগাম। ক্যান্ডি। শুকনো ফল। কোনও ভুল হত না।

যে কাজটা করা উচিত ছিল তাঁর আত্মজদের। সেটা নিঃশব্দে করে গিয়েছেন কোনও এক রক্তের সম্পর্কহীন মোনোয়া। দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনানিঃসন্দেহে ফুটবলের রাজপুত্র। কিন্তু তাঁর মতো নিঃস্ব রাজপুত্রও বা আর ক’জন আছে?


সর্বশেষ সংবাদ