করোনাকালে পিয়নের চাকরি করতেও রাজি ‘রিপন ভিডিও’ খ্যাত রিপন

  © ফাইল ফটো

নিজের বানানো ছোট ছড়া (তার ভাষায় ছন্দ) বানিয়ে নিজেই তা উপস্থাপন করতেন সামাজিক যোগােযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পরে ফেসবুক পেইজ 'রিপন ভিডিও' থেকে এসব ছোট ছোট ছন্দ তৈরি করে তা ফেসবুকে এসে ভিডিওতে সেসব বলতেন। সামাজিক যোগােযোগ মাধ্যমে এসব ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ভিডিও। রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠেন 'রিপন ভিডিও' খ্যাত রিপন।

নেত্রকোনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক রিপন মিয়া পেশাগত জীবনে একজন কাঠমিস্ত্রী। করোনার আগ মুহূর্তেও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে মহামারি করোনা ভাইরাসের এই চরম দুর্দিনে এসে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে তার। করোনাকালীন এই দীর্ঘ সময়ে বন্ধ রয়েছে কাঠমিস্ত্রীর কাজ। গত ৬-৭ মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে ঘরে খাবার নেই। সাম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় এমন দৃশ্যই দেখিয়েছেন তিনি।

ওই ভিডিও বার্তায় তিনি তার সংসারের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক দশার কথা বলেন। ভিডিও করার সময় তিনি তার রান্নাঘরে নিয়ে যান ক্যামেরা। সেখানে ভাতের হাঁড়িতে কিছু চাল দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখেন বন্ধুরা কয়েকটা চাল আছে। এটাও একজনের কাছ থেকে ধার করে আনা। খুব কষ্টে আছি বন্ধুরা।

রিপন ওই ভিডিওতে তার মা'কেও নিয়ে আসেন। তার মা বলেন, 'আমার পোলাডার ভিডিও দিয়া মানুষ কত কত টাকা কামাই করতাছে শুনতাছি, আর আমার পোলার ঘরে চাউল নাই। যারা তারে নিয়া টাকা কামাইতাছে তারা আগাইয়া আইতাছে না। আমাগো এখন একটু সাহায্য দরকার। আমার পোলাডারে একটু সাহায্য করে আপনারা। এখন তো বন্যা। পোলা তো কাজ কাম করতে পারে না এখন। আমরা ডেলি আইনা ডেলি (প্রতিদিন) খাই। লেখাপড়া নাই, কিচ্ছু জানে না। ওরে দিয়া মাইনষে কামাই করতাছে। আপনাদের কাছে এইটাই বলি যে আপনারা একটু আমার পোলারে ভাও কইরা দিয়েন। যেন দুই বেলা ডাইল ভাত খায়া থাকতে পারে।'

রিপনের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, 'আমার ৬-৭ মাস ধরে কাজ নাই। আমি কাঠের দোকানে কাজ করতাম, সেই দোকান বন্ধ। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুইরা মাইনষের বাড়িঘর বাইন্দা দিতাম সেইডাও এহন কেউ করায় না, কারণ মাইনষের কাছে এহন টাকা নাই। আমি বিপদে পইড়া মাইনষের কাছে সাহায্য চাইছি। মানুষ আমারে হেল্প করছে। আমার বাড়িতে এহন এক মাসের চাউল আছে। এক মাস চলবো। তারপরে কি করমু?'

তিনি বলেন, 'আমার এহন একটা চাকরি দরকার। আমি খুব শিক্ষিত না। কিন্তু কিছু কাজ তো করতে পারমু। ভালো চাকরি তো কপালে থাকবে না। তবে মোটামুটি একটা চাকরি হলেই হবে। পিওন-টিওনই হইলে, ইচ্ছা হইলে ফাইলটাইল আগায় দিলাম, এইটা করলাম, ঐটা করলাম। পিয়নের মতো একটা চাকরি পাইলে করতাম। আমি খুব বিপদে আছি, দ্যাখেন না ভাই যদি লেইখা কিছু হয় আমার জন্য।'

 


সর্বশেষ সংবাদ