পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান ট্রাম্প, কিন্তু সৌদি আরবে কেন?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ PM , আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫২ PM

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ খোঁজার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সৌদি আরবে বৈঠক করতে পারেন তিনি।
গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক মার্কিন আইনপ্রণেতা এবং এ পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র একথা জানিয়েছে।
কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনের সম্ভাব্য স্থান হিসাবে উপসাগরীয় দেশটিকে কেন বেছে নিলেন তিনি এ প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও তিনি বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। তবে শীঘ্রই এ বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও এতে অংশ নিতে পারেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন।
সৌদি আরব এক বিবৃতিতে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ এবং দেশটিতে সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরব তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।”
মিউনিখ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাককল বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন এবং জেলেনস্কির মধ্যে এ আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে “শেষ পর্যন্ত শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং এই সংঘাতের অবসান ঘটানো।”
সৌদি আরব ভেন্যু হওয়ার সম্ভাব্য কারণ:
আসন্ন ট্রাম্প-পুতিন সম্মেলনের জন্য চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ আয়োজক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তবে মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল সেলেম মনে করেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য সৌদি আরব একটি নিরপেক্ষ ভেন্যু হতে পারে।
পল সেলেম বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ইউরোপীয় দেশে এই বৈঠক আয়োজন সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক খাত্তার আবু দিয়াব বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে জেনেভার মতো স্থান বেছে নেওয়া হতো। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সুইজারল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় এবার বিকল্প হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সৌদি আরব পুতিনের সঙ্গে সফলভাবে পারস্পরিক স্বার্থ ও আস্থার ভিত গড়ে তুলেছে এবং দেশটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য নয়, যা পুতিনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে পুতিনের সেখানে গেলে গ্রেফতারের ঝুঁকি নেই।
সৌদি আরব আগে থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একাধিকবার স্বাগত জানিয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ উদ্দেশ্যে, জেদ্দায় একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজনও করা হয়েছিল যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন।
ট্রাম্পের কৌশলগত স্বার্থেও সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে তার প্রথম বিদেশ সফর ছিল সৌদি আরবে, যা দেশটির কূটনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করেছিল।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. খাত্তার আবু দিয়াব বলেন, চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কৌশলগত প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরব এবং আশেপাশের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সহজ করে বললে, ট্রাম্প চীনকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব ৯৫৪আরও শক্তিশালী করতে চান।
যদিও সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, আবু দিয়াব এবং চৌকেরের মতে, সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন, যেমন ধর্মীয় পুলিশ বাতিল করা বা নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া, সৌদি আরবের ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী উন্নত করেছে। এটা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তাদের রাজনৈতিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও বাড়িয়েছে।
সূত্র: বিবিসি