জনসংখ্যা বাড়াতে নতুন ফন্দি, এবার কলেজে পড়ানো হবে ‘লাভ এডুকেশন’
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ PM , আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ PM
চীনের জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে প্রেম ও বিয়েতে আগ্রহী করে তুলতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির সরকার। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হবে “লাভ এডুকেশন” নামে একটি বিশেষ কোর্স। এর লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেম, বিবাহ এবং পরিবার গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা।
চীন, একসময় বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ, এখন ভারতের কাছে স্থান হারিয়েছে। ২০২৩ সালে দেশটির জনসংখ্যা ২.০৮ মিলিয়ন কমে দাঁড়িয়েছে ১.৪১ বিলিয়নে। একই সঙ্গে জন্মহারও ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালে মাত্র ৯.০২ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৭% কম।
চীনা বিশ্লেষকদের মতে, ক্রমহ্রাসমান জন্মহার এবং দ্রুত বার্ধক্যের কারণে অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। সরকারি খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমে যেতে পারে উৎপাদনশীল জনশক্তি।
চায়না পপুলেশন নিউজের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৫৭% কলেজ ছাত্র প্রেমে পড়তে নারাজ, যা খুবই উদ্বেগজনক।
এমন পরিস্থিতিতে, সরকার একটি অদ্ভুত উপায়ে সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিবাহ, প্রেম এবং সন্তান ধারণের বিষয়ে পড়াশোনা করাতে বলা হচ্ছে। যাতে এই সাংসারিক বিষয়ে তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আসে। এই কারণেই চীনের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হবে “লাভ এডুকেশন”।
বিয়ে করতে চাইছেন না তরুণরা
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এভারগ্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিয়ে করার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। তরুণ-তরুণীরা আর বিয়ে করতে চাইছেন না। ২০১৩ সালে, ১৩.৪৭ মিলিয়ন বিবাহ রেজিস্টার করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটি ৮.১৩ মিলিয়নে নেমে এসেছে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে ধনী শহরগুলোতে বিবাহের হার আরও কম থাকে।
চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য দেখায় যে ২০২৪ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে, শুধুমাত্র ৪.৭৪ মিলিয়ন বিবাহ রেজিস্টার করা হয়েছিল, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৬% হ্রাস পেয়েছে। আসলে, ২০১৩ সাল থেকে এক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আর খুব কম বিবাহের হারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে কম জন্মহারও। কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে অবিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ করাও কঠিন।
জন্মহার ব্যাপক কম
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে, একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর হল চীনে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালে, জনসংখ্যা ২.০৮ মিলিয়ন কমেছে এবং শুধুমাত্র ৯.০২ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে, ২০২২ এর তুলনায় যা ৫.৭% কম। ফলস্বরূপ, চীনে অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৫% এরও বেশি কমেছে এবং সেগুলোতে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যাও টানা তৃতীয় বছর ধরে কমেই চলেছে।
কেন চীনের কলেজ পড়ুয়ারা প্রেম এবং বিয়েতে আগ্রহী নন
পড়ুয়াদের জন্য, সম্পর্কের সঙ্গে পড়াশোনার ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। চিনের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং চাহিদাপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য কিছুতে ফোকাস করা কঠিন করে তোলে।
শিক্ষার খাত অত্যন্ত কঠিন
প্রথমত, চীনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া খুবই কঠিন। কারণ এ জন্য বিশ্বের অন্যতম কঠিন এবং চীনের জাতীয় পরীক্ষা গাওকাও পাস করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীরা কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেন এবং শুধুমাত্র অল্প সংখ্যকই সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন। গাওকাও চীনা গণিত, ইংরেজি এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পরীক্ষা করে। ২ দিনের পরীক্ষার পর, শিক্ষার্থীরা তাদের স্কোর, ভর্তির সম্ভাবনার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়।
গাওকাও পাস করার পরও শিক্ষার্থীরা অনেক চাপের মুখে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং পাস হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ভালো পারফর্ম করতে হয়। এই চাপ অনেক শিক্ষার্থীকে শুধু তাদের পড়াশোনাতেই মনোনিবেশ করতে প্ররোচিত করে, যে কারণে তাদের মধ্যে ৫৭% প্রেমে পড়তে চান না।
বেকারত্ব- আরও একটি বড় সমস্যা
কম বিবাহের হার ছাড়াও, অন্যান্য কারণগুলোও তরুণদের সন্তান ধারণে উৎসাহ কমিয়ে দিয়েছে। এমনই একটি প্রধান সমস্যা হল বেকারত্বের হার। ২০২৩ সালে, চিনের তরুণ সমাজে বেকারত্ব ১২.১% পৌঁছেছে, এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি তরুণদের স্নাতক হওয়ার পরে চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন করে তুলছে। অর্থনীতি মন্থর হচ্ছে, এবং কাজের কম সুযোগ থাকছে।
উচ্চ বেকারত্বের পাশাপাশি, ব্যয়বহুল আবাসন এবং সন্তান লালন-পালনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় অনেককেই বিয়ে করতে বা পরিবার শুরু করতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে। বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে, চীনে বিবাহ এবং জন্মহার এত কম হওয়ার প্রধান কারণ হলো এই আর্থিক চাপগুলোই।
“লাভ এডুকেশন বা প্রেম শিক্ষা” কি কার্যকরী হবে
চীনের জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবেলায়, অল্প বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য, এই এডুকেশন সম্পর্ক এবং যোগাযোগের মতো বিষয়গুলোতে ফোকাস করবে। সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা এবং কেস স্টাডিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে, এই কর্মসূচি কার্যকর হবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। শিক্ষার্থীরা যে কঠিন অর্থনৈতিক এবং একাডেমিক চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়, তা দেখে এটা স্পষ্ট নয় যে “প্রেম শিক্ষা” আদতে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারবে কিনা। নভেম্বরে চীনের সরকার স্থানীয় অধিকর্তাদের, দেশের জনসংখ্যা হ্রাস কমিয়ে আনা এবং সঠিক বয়সে বিয়ে ও সন্তান ধারণের প্রচারে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। যাইহোক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এ প্রচেষ্টাগুলো তরুণদের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, চায়না পপুলেশন নিউজ