রতন টাটা হার্ভার্ড, কর্নেলের ছাত্র ছিলেন
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৭ AM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৯ AM
বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন ভারতের শিল্পপতি ও টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা। বুধবার (৯ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। রতন টাটা হার্ভাড ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৫৯ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য ও অ্যাডভেঞ্চেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন রতন টাটা।
১৯৩৭ সালে তদানীন্তন বম্বেতে রতন টাটার জন্ম। তার বাবা নভল হরমুসজি টাটাকে দত্তক নিয়েছিল টাটা পরিবার। রতনের বছর দশেক বয়সেই তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সেই সময় থেকেই ঠাকুরমা নভাজিবাই টাটা তার দেখাশোনার ভার নেন। আইনানুগভাবে দত্তক নেন রতনকে।
মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রতন টাটার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। এরপর তাকে ভর্তি করানো হয় মুম্বাইয়েরই ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে। পরে তিনি শিমলার বিশপ কটন স্কুল এবং আমেরিকার নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলেও পাঠ নেন। ১৯৫৫ সালে রতন গ্র্যাজুয়েট হন শেষোক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে। ১৯৫৯-এ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
সত্তরের দশকে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন রতন। তাকে প্রথমে টাটা গোষ্ঠীর ব্যবস্থাপক স্তরের একটি পদে নিয়োগ করা হয়। তার পূর্বসূরি জাহাঙ্গির রতনজি দাদাভাই টাটা (যিনি ‘জেআরডি’ হিসাবেই সমধিক পরিচিত) কমবেশি ৫০ বছর শতাব্দী প্রাচীন ওই গোষ্ঠীর দায়িত্ব সামলেছিলেন। জেআরডির উত্তরসাধক হিসাবে রতনের কাছেও প্রভূত প্রত্যাশা ছিল গোষ্ঠীর। প্রথম থেকেই রতন সে ব্যাপারে সচেতনও ছিলেন। ১৯৯১ সালে জেআরডি চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নেন এবং সেই দায়িত্ব এসে পড়ে রতনের ওপর। নব্বইয়ের দশকে ভারত সরকার উদারীকরণের দিকে ঝোঁকে। সরকারের নয়া নীতির সঙ্গে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সাযুজ্য খুঁজে পান রতন।
২০১২ সালে রতন ৭৫ বছরে পা রাখেন। সে বছরই তিনি অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদাধিকারীদের জন্য ৭৫ বছর বয়ঃসীমা নির্ধারণ রতনই করেছিলেন। তার নিজের ক্ষেত্রেই নিয়মটি তিনি প্রথম প্রয়োগ করেন। কিন্তু অবসরের পরেও তার নিজস্ব বিনিয়োগের কাজ তিনি চালিয়ে যান। বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট, অ্যাপ-ক্যাব, অনলাইন সম্পত্তি বিক্রয় সংস্থায় তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লগ্নি করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে রতন যে এক আশ্চর্য মানুষ ছিলেন, তা সর্বজনবিদিত। অকৃতদার রতন তার পদ ও মর্যাদার তুলনায় নিরাভরণ জীবনই যাপন করতেন। শান্তনুর স্মৃতিকথা থেকে এক সুরসিক, স্নেহশীল মানুষের পরিচয়ই পাওয়া যায়। নিজস্ব পরিবার না থাকলেও তিনি যে গোটা টাটা গোষ্ঠীকে পরিবার হিসেবেই ভাবতেন, তা তার একাধিক জীবনীকারের লেখায় লভ্য। দফতরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে পৌঁছতেন, সফরের সময়ে একাকীত্বই তার প্রিয় ছিল। তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত বৈমানিকও। ২০০৭ সালে ‘এরো ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীতে তিনি সহ-পাইলট হিসাবে একটি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান এবং বোয়িং এফ-১৮ চালিয়ে চমক দিয়েছিলেন।
তার মৃত্যুকে অনেকেই হয়ত ‘নক্ষত্রপতন’ বলবেন। কিন্তু রতন যে মেজাজ ও মর্জির মানুষ ছিলেন, তিনি নিজেই নির্ঘাত ‘নক্ষত্র’ শব্দটিতে আপত্তি করতেন। ভারতে বাণিজ্য মহারথীরা ‘নক্ষত্র’ হয়ে ওঠেন অচিরেই। বৈভব আর জৌলুসের আতশবাজি জ্বালিয়ে রাতকে দিন করা তাদের বেশির ভাগের কাছেই প্রিয়তম বিলাস। কিন্তু রতন টাটা নামক অস্তিত্বটি সেই রোশনাই বা কোলাহল থেকে বহু দূরের বিষয়। অনেকটা রাতের আকাশের নক্ষত্রের মতোই। নক্ষত্রের আয়ু শেষ হয়। কিন্তু তার পরেও তার দ্যুতি বেঁচে থাকে বহুকাল। রতন টাটা সেভাবেই থেকে যাবেন।