ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অপমানে কনস্টেবলের চাকরি ছেড়ে হচ্ছেন বড় অফিসার

উদয়কৃষ্ণ রেড্ডি
উদয়কৃষ্ণ রেড্ডি  © আনন্দবাজার

পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন তিনি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অপমানে চাকরি ছেড়েছিলেন। সাবেক সেই কনস্টেবলই পাস করলেন ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। তিনি হতে চলেছেন বড় সরকারি কর্মকর্তা। উদয়কৃষ্ণ রেড্ডি দেশটির ২০২৩ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৭৮০ র‌্যাঙ্ক পেয়েছেন। 

৩০ বছরের যুবক হতে চান আইএএস। প্রাক্তন এ পুলিশ কনস্টেবল চাকরি ছেড়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেছিলেন প্রস্তুতি। তাতেই আসে এ সাফল্য। কেন ছেড়েছিলেন চাকরি? উদয় জানান, ২০১৮ সালে ৬০ পুলিশ কর্মীর সামনে তাঁকে অপমান করেন সার্কল ইনস্পেক্টর (সিআই)। সেদিন পুলিশ ড্রিল চলছিল। শৃঙ্খলা পাঠ দেওয়া হচ্ছিল। তাতে দেরি করে এসেছিলেন উদয়। সে কারণে কথা শুনিয়েছিলেন ঊর্ধ্বতন। তবে অপমানের শুরুটা হয়েছিল অনেক আগে।

ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যান। বড় হয়েছেন ঠাকুমার কাছে। তেলুগু মাধ্যমের সরকারি স্কুলে পড়াশোনা। আইএএস হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য ছিল না। ২০১৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশে যোগ দেন। তখন বয়স ছিল ১৯ বছর। নিজের ব্যাচে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

চাকরির ফাঁকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উদয়। সে বিষয়টি কানে যায় সার্কল ইনস্পেক্টরের। বিষয়টি শোনার পর তাঁকে অপদস্থ করেন সিআই। প্রকাশ্যে কটাক্ষ করতে থাকেন। এক বার রাজামুন্দ্রিতে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সে বার ইচ্ছা করেই সিআই তাঁকে সেন্ট্রির ডিউটিতে নিয়োগ করেছিলেন। 

এ ক্ষেত্রে সারা রাত থানার বাইরে ছোট জায়গায় বসে পাহারা দিতে হয় পুলিশকর্মীদের। ডিউটির কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি উদয়। উদয় বলেন, যখনই কোনও সুযোগ আসত বা পরীক্ষা হত, সিআই অপদস্থ করার, আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার চেষ্টা করতেন। এ নিয়ে ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি লিখেছিলেন।

সিআই নানাভাবে কটাক্ষ করতেন। বার বার বলতেন, স্বপ্ন না দেখে তার মনে রাখা উচিত যে, তিনি একজন কনস্টেবল। ২০১৮ সালের ১০ অগস্ট পুলিশের ড্রিল ছিল। সেখানে যোগ দিতে দেরি করেন উদয়। তিনি বলেন, বরাবরই তাকে হিংসা করতেন সিআই। হেনস্থা করার সুযোগ খুঁজতেন। এ দিন দেরি করে আসায় সবার সামনে অপমান করা শুরু করেন। তিনি বলেছিলেন, এই স্যার নাকি আইপিএস বা আইএএস হবেন!

সেখানেই থামেননি সিআই। উদয় ড্রিলে যোগ দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। তাতে অপমানের মাত্রা বেড়েছিল। এক ঘণ্টা শাস্তি দেন। তারপর বলেন, ‘অত স্বপ্ন দেখো না। তুমি নেহাতই একজন কনস্টেবল।’ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি উদয়। সেদিনই চাকরিতে ইস্তফা দেন। পুরোদমে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। স্বপ্ন ছিল আইএএস অফিসার হবেন।

তাতেও নিস্তার পাননি উদয়। ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি সিআই। ছুড়ে ফেলে দেন। পাল্টা বলেন, ‘আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?’ তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের ইচ্ছাতেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু ইস্তফাপত্র ঊর্ধ্বতনদের কাছে পৌঁছে দেননি সিআই। পরে থানা থেকে ছুটি নিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। কোচিংয়ের শিক্ষক শরৎ চন্দ্রকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। উদয় জানিয়েছেন, শরৎ চন্দ্র না থাকলে তিনি এ সাফল্য পেতেন না।

ইস্তফা দেওয়ার এক বছর পর উদয়কে ডেসার্টেশন নোটিস পাঠানো হয়। তিনি বলেন, সিআই তার ওপর নজরদারি চালানোর জন্য দল তৈরি করেছিলেন। জেনারেল ডায়েরিতে তাঁকে ডেসার্টার বলে লেখা হয়। যে সব সেনা পালিয়ে যান, তাঁদের বলা হয় ‘ডেসার্টার’।

আরো পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে ভোটগ্রহণ শুরু, জানুন চমকপ্রদ পরিসংখ্যান

এত বাধার পরেও ২০১৯ সালে ইউপিএসসির প্রিলিমস পাস করেন উদয়। মেইনসের জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয় তাকে। তবে এর আগে ওয়েবসাইটে ঊর্ধ্বতনের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি দাখিল করতে হয়। সে জন্য ইউনিট অফিসার সিদ্ধার্থ কৌশলের সঙ্গে দেখা করেন উদয়। পরে কৌশল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ফোন করে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।

এরপরই উদয়ের ইস্তফা গৃহীত হয়। যদিও সে বার মেইনসে সফল হননি উদয়। এরপর দু’বার ব্যর্থ হন। চতুর্থ বারে সফল তিনি। দিনে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন। তিন ঘণ্টা জিমে শরীরচর্চা করতেন।  

আইএএস হয়ে পশুদের জন্য কিছু করতে চান উদয়। ১০৮ নম্বরে ফোন করলে যেমন অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিষেবা পৌঁছে যায়, সে রকম নম্বর চালু করতে চান। যেখানে ফোন করলে পশুদের কাছেও সাহায্য পৌঁছে যাবে। খবর: আনন্দবাজার।


সর্বশেষ সংবাদ