ইসরায়েলে হামলায় যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইরান
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৬ PM , আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৯ PM
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ১৩ জন নিহত হয়। এর প্রতিবাদে রোববার (১৪ এপ্রিল) গভীর রাতে প্রায় দুই শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ইরান। ইসরায়েল তার অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র রুখে দিলেও বেশ কয়েকটি মিসাইল আঘাত হানে ইসরায়েল ভূখন্ডে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের এই হামলায় ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটি ‘কিছুটা’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। এছাড়া এতে ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইরান কি ধরনের ড্রোন আর মিসাইল ব্যবহার করেছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে বিশ্বের সামরিক বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এমতাবস্থায় ইসরায়েলে ইরান যেসব অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করেছেন আল-জাজিরার প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা অ্যালেক্স গ্যাটোপলাস।
আরও পড়ুন: বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধ সহ্য করার সক্ষমতা রাখে না: সতর্কবার্তা গুতেরাসের
এই সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইরান ইসরায়েলে ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১১০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। হামলায় যেসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো আকারে ছোট ছিল এবং ‘সস্তা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো’ তা ব্যবহার করা হয়েছে।
আল জাজিরার এই সামরিক সংবাদদাতা আরও বলেছেন, ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছিল বহু স্তরবিশিষ্ট। এগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছিল, যাতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে পারে।
ইসরায়েলের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে অন্তত ১৫টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। তবে ইসরায়েল এর মধ্যে অধিকাংশই ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যালেক্স গ্যাটোপলাস। এছাড়া হামলায় ব্যবহৃত ‘ড্রোন মোহাজের-টেন’ ই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে টানা ২৪ ঘণ্টা ৩০০ কেজি ওজন নিয়ে উড়তে সক্ষম।
জানা গেছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে যা ঘণ্টায় তুলতে পারে ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি গতি। আরও আছে ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে পারা খাইবার ও ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম হাজ কাশেম।
তবে হামলার পর থেকেই বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল। ক্ষয়-ক্ষতি এরাতে ইতিমধ্যে জনসমাবেশ ও স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাতে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল।
এদিকে এই হামলার পর নিজ নিজ আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে ইরাক, জর্ডান ও লেবানন। এছাড়া নিজ ভূখন্ড ব্যবহার করে ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোকে ইরানে হামলা করতেও না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরব দেশগুলো। লন্ডন-ভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট আই অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেছেন, ইসরায়েলকে ইরান আক্রমণের জন্য কোনো দেশ তার আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিলে সেসব দেশও ইরানের পক্ষ থেকে কঠিন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে।
এমন উত্তেজনার মধ্যে আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) ইসরায়েলে অনুরোধে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পরিষদের সভাপতির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত জিলাড আরডান ইরানের হামলাকে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের প্রতি নিকৃষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেন। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করতেও নিরাপত্তা পরিষদে অনুরোধ করেছে ইসরায়েল।