উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করল বিশ্ব খাদ্য সংস্থা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর তাণ্ডবে কয়েকদিন আগে বন্ধ হয়ে যায় নাসের হাসপাতালের পরিষেবা। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে দেখা যায় অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির ২৬ শতাংশ বা পৌনে ৬ লাখ বাসিন্দা বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি রয়েছেন।

এর মধ্যেই ত্রাণবাহী গাড়িবহর গোলাগুলি ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখবে বলে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের এই খাদ্য সংস্থাটি বলেছে, “গাজার উত্তরে সাহায্য সরবরাহ স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত হালকাভাবে নেওয়া হয়নি। যেহেতু আমরা জানি, সেখানে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে এবং আরও মানুষ ক্ষুধায় মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।”

সংস্থার কর্মীরা এবং গাড়িবহর গোলাগুলি এবং লুটপাটের শিকার হচ্ছে বলে ডব্লিউএফপি জানিয়েছে। এ সপ্তাহান্তে সংস্থাটি প্রতিদিন ১০ ট্রাক খাবার পাঠানোর সপ্তাহব্যাপী সরবরাহ কর্মসূচি শুরুর আশা করেছিল। উত্তর গাজায় চাহিদার তুলনায় সাহায্য অপ্রতুল এবং সাহায্য সরবরাহের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তা ছাড় পাওয়ারও প্রয়োজন হয়।

ডব্লিউএফপি বলেছে, তারা রোববার উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহ শুরু করেছিল। তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ওইদিন সরবরাহ শুরু হয়। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সাহায্য ট্রাকগুলোতে হামলা হওয়ার কারণে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

সংস্থাটি বলেছে, “গাজায় যাচ্ছিল ত্রাণবাহী গাড়িবহর। কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষেরা ট্রাকগুলোতে হামলে পড়ায় ট্রাক নিয়ে এগুনো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া, নগরীতে ঢোকার সময় গোলাগুলির মুখেও পড়তে হয়েছে।” পরের দিন ডব্লিউএফপি’র ট্রাক গাজার কেন্দ্রস্থলে দেইর আল বালাহ এবং দক্ষিণের খান ইউনিস নগরীর মধ্যে লুটপাটের শিকার হয়েছে।

ডব্লিউএফপিসহ আরও দুটো জাতিসংঘ সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সোমবার বলেছে, গাজায় খাবার এবং সুপেয় পানির প্রচণ্ড অভাব আছে। তার মধ্যে বাড়ছে রোগ। দু’য়ে মিলে চরম অপুষ্টি দেখা দিচ্ছে।

জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বলছে, বিশেষ করে গাজার উত্তরে খাদ্য সংকট খুবই মারাত্মক। জানুয়ারিতে ওই অঞ্চলে ২ বছরের নিচের ৬ জনে একজন শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার বলে খবর পাওয়া গেছে। আজ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ। যার বেশির ভাগই নারী এবং শিশু। [সূত্র: আল-জাজিরা]


সর্বশেষ সংবাদ