তুরস্কের জাতীয় নির্বাচন

ক্ষমতার বদল নাকি এরদোয়ানের আরও ৫ বছর— রাতে জানা যাবে

  © টিডিসি ছবি

তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে আজ রবিবার (২৮ মে)। প্রথম দফায় কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। ক্ষমতার পালাবদল হবে নাকি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ২০ বছরের ক্ষমতার দৌড় আরও দীর্ঘায়িত হবে, তা নির্ধারিত হবে দ্বিতীয় দফা ভোটে।

আজ তুরস্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, যা চলবে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তুর্কি নাগরিকদের ভোট নেয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ভোট শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে।

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরেক প্রার্থী কেমাল কিলচদারুলু এরদোয়ানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। কেমালের পক্ষে বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের জোটের সমর্থনে রয়েছে। এই নির্বাচনকে তিনি তুরস্কের ভবিষ্যতের নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন।

এখনো পর্যন্ত এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানই ফেভারিট হিসেবে এগিয়ে আছেন বলে মনে হচ্ছে। ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বতর্মান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে তার সমর্থকদের ‘নতুন যুগ’এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।

নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছিলেন, যা শতকরা হিসেবে মোট ভোটারের ৮৮.৮ শতাংশ। দুই প্রার্থীর নজরই এবার ৮০ লাখ ভোটারের দিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন যারা আগেরবার ভোট দেননি কিন্তু এবার ভোট দিতে পারেন। যার ফলে গতবারে তুলনায় ভোটারের সংখ্যা বেশি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে এরদোয়ান তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ছেন। তবে কিছুটা সুবিধা পেলেও তা ভোটিংয়ের ফলাফল পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রেখেছে বলে তারা দাবি করছেন না।

প্রচারণার শেষদিনে বিরোধী জোটের নেতা কিলিচদারুলু বেশ অভিনব ধরণের প্রেসিডেন্সির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার প্রাসাদে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি আপনাদের মত সাধারণভাবে থাকতে চাই...আর আপনাদের সমস্যা সমাধান করতে চাই।

তুরস্কের মানুষের মতামত এই মুহূর্তে দুই মেরুতে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, বিরোধী নেতা কিলিচদারুলুর সমর্থকরা মূলত ধর্ম নিরপেক্ষ– তবে তাদের মধ্যে অনেক জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সমর্থকও রয়েছেন।

এদিকে, কেমালের সাথে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এরদোয়ান।

তুরস্কের লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, লিরার দরপতন, বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি, সুদের হার কমানোসহ বেশ কিছু পরিস্থিতি এরদোয়ানের বিপক্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু এই জনসংখ্যারই একটা বড় অংশ আবার এরদোয়ানের ওপরই আস্থা রাখছেন। অনেকেই মনে করেন বিরোধী জোটের সাথে সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে, যেমনটা এরদোয়ান অভিযোগ করেছেন।

তবে, আজকের নির্বাচনে যে দল বা জোটই জিতুক, তুরস্কের সংসদের দখল এরই মধ্যে এরদোয়ানের ইসলামপন্থী একে পার্টি এবং দক্ষিণপন্থী এমএইচপি পার্টির কাছে রয়েছে।

প্রথম ধাপের ভোটে এরদোয়ানের জোট ৪৯.৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। যদিও বিরোধী জোটের সাথে তার ভোটের ব্যবধান ছিল খুবই কম। কিলিচদারুলু প্রথম ধাপে ভোট পেয়েছিলেন ৪৪.৯০ শতাংশ, অর্থাৎ এরদোয়ানের সাথে তার ব্যবধান ছিল খুবই কম।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবার নির্বাচিত হলে একটি নতুন ‘তুর্কি শতকের’ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি আরও উন্নয়ন, আরও শক্তিশালী এক তুরস্ক উপহার দেবেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ