র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল নিচেই নামছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে আমেরিকার আছে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া ২৭টি আছে ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে। কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে ইংল্যান্ডের আছে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া ১৭টি আছে ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে। জার্মানির কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ের ১০০-র মধ্যে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ের ১০০-এর জাপানের আছে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ের ৫০-এর মধ্যে চীনের আছে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আর ১-২০০-এর মধ্যে আছে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়।

এবার আসি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ভারত ঈর্ষণীয় অবস্থানে। তাদের ১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে আছে ৬টি প্রতিষ্ঠান অবস্থান। এর মধ্যে ১৫৫, ১৭২ এবং ১৭৪ অবস্থানে যথাক্রমে IISc, IIT বোম্বে এবং দিল্লী। এইদিকে পাকিস্তান কি করছে দেখি। কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে পাকিস্তানের আছে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় আর ৬৫০-এর মধ্যে আছে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে আছে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর বাংলাদেশের? কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের ১টি বিশ্ববিদ্যালয়ও নাই। ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে প্রথমে আছে বুয়েট এবং তারপরে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে লক্ষণীয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কেবল নিচে নামছেই। ২০১২ সালে কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১-এর মধ্যে। ২০১৪ সালে তা পিছিয়ে গিয়ে হয় ৭০১তম অবস্থান।

এরপরে ২০১৯ সালে তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০০-এর মধ্যে থাকে আর ২০২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান যদিও ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে কিন্তু এ অবস্থান নিম্নগামী। এইভাবে চলতে থাকলে ধারণা করা যায় আগামী কয়েক বছরে ১ থেকে ১০০০-এর মধ্যেও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: র‌্যাংকিং দেখি না: ঢাবি উপাচার্য

উপরের পরিসংখ্যান দেখলে স্পষ্ট হয় যে, র‍্যাংকিংকে আপনারা যতই বলেন পুছেন না কিন্তু এই পরিসংখ্যান একটা স্পষ্ট বার্তা দেয়। একটি দেশ কতটা উন্নত, বিশ্ব দরবারে কতটা ক্ষমতাবান তার অবস্থানের সাথে র‍্যাংকিংয়ে কোন দেশের কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার একটা কো-রিলেশন আছে।

এই র‍্যাংকিংয়ে আমেরিকা সেরা অবস্থানে। কারো কোন সন্দেহ আছে যে বিশ্বে আমেরিকাই সবচেয়ে ক্ষমতাবান। র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইংল্যান্ড। কারো বুঝতে অসুবিধা আছে যে ইংল্যান্ড এখনো দ্বিতীয় ক্ষমতাধর দেশ। তারপর আসে জার্মানি এবং জাপান। আর এইদিকে চীন যে ক্ষমতাধর হয়ে উঠছে সেটাও এই র‍্যাংকিংয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এখন থেকে এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারি চীন, ভারত, পাকস্তান দিনদিন ভালো করছে। আর বাংলাদেশ সময়ের সাথে খারাপ করেই চলেছে।

এ থেকে উত্তরণ জরুরি। সমস্যা হলো আমাদের সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সমস্যাকে সমস্যাই মনে করছে না। এরা কেবল অবকাঠামো নির্মাণকেই উন্নয়ন ভাবছে। ব্যক্তি লেভেলে মূর্খরাই দেখবেন টাকা হলে ফুটানি দেখানোর জন পাকা ভবন বানায় আর গাড়ি কেনে। কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না।

এখন বাজেট বরাদ্দ চলছে। দেখা গেছেছে গতবার জিডিপির ২.০৮% শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়েছিল আর এইবার কমিয়ে জিডিপির ১.৮৮% দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে যেখানে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া উচিত সেখানে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।

তাহলে শিক্ষায় র‍্যাংকিং কিভাবে বাড়বে? আর শুধু যে বরাদ্দই একমাত্র সমস্যা তাও না। সাথে আছে দলান্ধ ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি। সবকিছু মিলিয়ে ভালো মানের শিক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন তা থেকে আমরা দিনদিন আরো দূরে সরে যাচ্ছি।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ